You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.04 | বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি ও অস্ত্র সাহায্য দিতে হবে- লােকসভায় কমরেড দশরথ দেবের ভাষণ | দেশের ডাক - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি ও অস্ত্র সাহায্য দিতে হবে
লােকসভায় কমরেড দশরথ দেবের ভাষণ

নয়াদিল্লী, ১৫ নভেম্বর: আজ লােকসভায় এক দৃষ্টি আকর্ষণী প্রশ্নের আলােচনায় অংশগ্রহণ করে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট দলের সহকারী নেতা কমরেড দশরথ দেব বলেন- প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, ওরা যদি আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে, আমরা তাদের ধাক্কা মেরে তাড়িয়ে দেব। কিন্তু কিছু ঘটনা বলতে চাচ্ছি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছে স্পষ্ট জবাব চাইছি।
মর্টার ও অন্যান্য অস্ত্রের সাহায্যে ত্রিপুরা সীমান্তে প্রচণ্ড গােলাবর্ষণ এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে একটি রাতও যায় না যেদিন সীমান্তের ওপার থেকে ত্রিপুরার অভ্যন্তরে গােলাবর্ষণ ঘটে না। বিশেষত বিলনীয়া সােনামুড়া, আগরতলা এবং কমলপুরে এর তীব্রতা প্রচণ্ড। তিনটি শহর থেকে লােকজন সরে গেছে। কিছু সংখ্যক কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হচ্ছে। তাদের সরে আসার আদেশ নেই। অন্যেরা সরতে বাধ্য হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন গােলা বর্ষণের মুখে। আগরতলায় প্রচণ্ড গােলা বর্ষিত হচ্ছে, দু’জন মারা গেছে, বিশ জন আহত হয়েছে, তারা অনেকে এখনও হাসপাতালে আছেন।
এই চারটি মহকুমা শহরেই নয়, ব্যাপক সীমান্ত এলাকার শত শত শত লােক বুলেটে আহত হচ্ছে, অনেকে মারা গেছে। একমাত্র কমলপুর শহরেই ৫০ জনের উপর মারা গেছে। কমলাসাগর, সীমনা সিধাই এলাকাতে গ্রামাঞ্চলে বহু লােক আহত হয়েছে মরেছে। পাকিস্তানি সেলিং এর জন্য শত শত গৃহ ধ্বংস হয়েছে, গবাদি পশু মরেছে, শস্যক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনগণ এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
কাজেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যখন বলছেন, আমাদের জোয়ানগণ সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত, তখন যারা সীমান্ত এলাকা ছেড়ে শরণার্থী হয়েছে সেইসব ভারতীয় নাগরিকগণ সম্পর্কে সরকার কোনাে রিলিফ দিচ্ছেন না কেন? যারা ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে, তাদের জন্য কি কোনাে কিছু করার নেই? অন্তত যতদিন তারা আবার সীমান্ত এলাকায় নিজ ঘর বাড়িতে ফিরে যেতে না পারছে, ততােদিন তাদের দেখবে কে? দ্বিতীয় বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে বার বার বলা হচ্ছে, উপযুক্ত সময়ে স্বীকৃতি দেয়া হবে। আমি জানি না কখন এই উপযুক্ত সময় দেখা দেবে। পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর সৈন্য সংহত করছে, সীমান্ত থেকে আমাদের এলাকায় শেলিং করছে। ভারতীয় নাগরিক হতাহত হচ্ছে। আপনারা যদি বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে শক্তিশালী অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত করেন, তারাই সীমান্ত থেকে পাক বাহিনীকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে, শুধু সীমান্ত থেকেই নয়, বাংলাদেশ থেকেই ওদের উৎখাত করতে সক্ষম হবে।
তাই আমি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চাই আর কত দিন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হীনতার বন্দিশালায় আবদ্ধ থাকবেন? ভারত সরকার কি অগৌণে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবেন?
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, স্থানচ্যুত ভারতীয় নাগরিকগণকে সর্বপ্রকার সাহায্য দেয়া হবে।
সরকার উপযুক্ত সময়েই বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবে, এটাই হচ্ছে আসল সিদ্ধান্ত। এটাকে সিদ্ধান্তহীনতা বলা ঠিক নয়।

সূত্র: দেশের গান
০৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
১৭ অগ্রহায়ণ, ১৩৭৮