বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – প্রথম খণ্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে প্রদত্ত ভাষার দাবী বিষয়ক স্মারকলিপি | পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনিতীঃ বদরুদ্দিন উমর, পৃষ্ঠা-১২১ | ২৪শে মার্চ, ১৯৪৮ |
এই সাক্ষাৎকারের সময় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে জিন্নাহর কাছে নিম্নলিখিত স্মারকলিপিটি* পেশ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের একমাত্র মুসলমান যুবকদের লইয়া গঠিত এই কর্মপরিষদ মনে করেন যে, বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। কারণ প্রথমতঃ তাঁহারা মনে করেন যে, উহা পাকিস্তানের সমগ্র জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের ভাষা এবং পাকিস্তান জনগণের রাষ্ট্র হওয়ার অধিকাংশ লোকের দাবী মানিয়া লওয়া উচিত।
দ্বিতীয়তঃ আধুনিক যুগে কোন কোন রাষ্ট্রে একাধিক ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গৃহীত হইয়াছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ নিম্নোক্ত কয়েকটি দেশের নাম করা যায়ঃ বেলজিয়াম (ফ্লেমিং ও ফরাসী ভাষা), কানাডা (ইংরেজী ও ফরাসী ভাষা), সুইজারল্যাণ্ড (ফরাসী, জার্মান ও ইতালীয় ভাষা), দক্ষিণ আফ্রিকা (ইংরেজী ও আফ্রিকানারা ভাষা), মিসর (ফরাসী ও আরবী ভাষা), শ্যাম (থাই ও ইংরেজী ভাষা), এতদ্ব্যতীত সোভিয়েট রাশিয়া ১৭টি ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করিয়াছে।
তৃতীয়তঃ এই ডোমিনিয়নের সমস্ত প্রাদেশিক ভাষার মধ্যে একমাত্র বাংলা ভাষাই রাষ্ট্রভাষার স্থান অধিকার করার পক্ষে উপযুক্ত। কারণ, সম্পদের দিক বিবেচনায় এই ভাষাকে পৃথিবীর মধ্যে সপ্তম স্থান দেওয়া হইয়াছে।
চতুর্থতঃ আলাওয়াল, নজরুল ইসলাম, কায়কোবাদ, সৈয়দ এমদাদ আলী, ওয়াজেদ আলী, জসিমউদ্দীন ও আরো অনেক মুসলমান কবি ও সাহিত্যিক তাঁহাদের রচনাসম্ভার দ্বারা এ ভাষাকে সমৃদ্ধিশালী করিয়াছে।
পঞ্চমঃ বাংলার সুলতান হুসেন শাহ সংস্কৃত ভাষার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও এই ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার পর্যায়ে উন্নীত করিয়াছিলেন, এবং এই ভাষার শব্দ সম্পদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ পারসিক ও আরবী ভাষা হইতে গৃহীত।
উপসংহারে আমরা বলিতে চাই যে, যে কোন পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেক নাগরিকের কয়েকটি মৌলিক অধিকার আছে। কাজেই যে পর্যন্ত না আমাদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয় সে পর্যন্ত বাংলা ভাষার জন্যে এই আন্দোলন চালাইয়া যাওয়া হইবে।
এই স্মারকলিপিটির খসড়া তৈরী করেন কমরুদ্দীন আহমদ