৮৪৫৫ কোটি টাকার পাঁচসালা পরিকল্পনা ঘােষণা
বাংলাদেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনায় মােট ৮ হাজার ৪শত ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯শত ৫২ কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়েছে সরকারি খাতে। বেসরকারি খাতে ধরা হয়েছে ৫০৩ কোটি টাকা। পরিকল্পনায় কৃষিকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এবং এই খাতে সবচয়ে বেশি ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এতে বার্ষিক জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে শতকরা সাড়ে পাঁচ ভাগ। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে আয়ােজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম দেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনা ঘােষণা করেন। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চার নীতির সাথে সঙ্গতি এবং সমাজতন্ত্রের পথে পূর্ণ মানের লক্ষ্য সামনে রেখেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করা এবং বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ধীরে ধীরে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তােলা। প্রথম পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যসমূহ হচ্ছে, ক. আয় ও ব্যয়ের সুষম বণ্টন, যথাসম্ভব দ্রুত অধিকসংখ্যক চাকুরির সুযােগ সৃষ্টি করে জাতীয় আয় যুক্তিসঙ্গত বৃদ্ধি করে দারিদ্রতা কমিয়ে আনা। খ. বাৎসরিক জাতীয় আয় শতকরা সাড়ে পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি করা এবং সার্বক্ষণিক চাকুরির পরিমাণ উন্নীত করা। গ. সাধারণ মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা। ঘ. বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা। আর এই উদ্দেশ্য অর্জনে প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ১. খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করে খাদ্য আমদানি বন্ধ করা। কৃত্রিমতন্তু দেশীয়ভাবে উৎপন্ন করা এবং দেশীয় ভাবে সিমেন্ট, ইস্পাত এবং সার উৎপন্ন করা। ২. রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রচলিত এবং অপ্রচলিত উভয় দ্রব্যের রপ্তানি বৃদ্ধি করা এবং উৎপাদনের কাঠামাের পরিবর্তন করে রপ্তানি বৃদ্ধিতে উৎসাহ প্রদান করা। পরিকল্পনার অন্যান্য লক্ষ্যসমূহ হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি সম্পূর্ণ পুনর্বাসন করার দক্ষতার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত সুসংহত করা। কৃষির আধুনিকীকরণ এবং জনসংখ্যার স্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সারাদেশে তার ভারসাম্য রক্ষা করা।
কৃষিখাত : পরিকল্পনায় কৃষিকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে মােট ১০৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতের বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে। ১০৪১ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে ২৬ কোটি টাকা।
শিল্পখাত : প্রথম পরিকল্পনাকালে কৃষির পরে শিল্পখাতেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এই খাতে মােট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৮৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৭৩৮ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ১৩৯ কোটি টাকা। শিল্পখাতে এই বরাদ্দের মধ্যে মােট বিনিয়ােগকৃত বরাদ্দ হচ্ছে ৭৯৮ কোটি টাকা এবং বিনিয়ােগ বহির্ভূত হচ্ছে ৭৯ কোটি টাকা।৭৬
রেফারেন্স: ২৭ নভেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ