বঙ্গবন্ধু কর্তৃক অর্থনৈতিক কাঠামাের মূলনীতি ঘােষণা
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষণা করেছেন যে, স্বাধীনতা ও মুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামাের ভিত্তি হবে কৃষি এবং কৃষকের সুনিশ্চিত কল্যাণ। বঙ্গবন্ধু সােমবার উত্তরা গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের সম্মেলনে জাতীয় অর্থনীতির কাঠামাের মূল নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উল্লেখিত ঘােষণা করেন। সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে রাজশাহী বিভাগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ যােগদান করেন। বঙ্গবন্ধু নতুন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে সকল শক্তি নিয়ােগ করার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের মােট জনসংখ্যার শতকরা ৮৫ জনই কৃষক। ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে অংশ নেবার জন্য এদের প্রেরণা জোগাতে হবে।
খাদ্য সংগ্রহ অভিযান : সরকারের খাদ্য সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, এই অভিযানকে সফল করে তােলা জাতীয় কর্তব্য। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তবুও এই কাজ চ্যালেঞ্জ স্বরূপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই কাজ তদারক করবেন। বঙ্গবন্ধু খাদ্য সংগ্রহ অভিযান চলাকালীন সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্যে বিশেষভাবে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মজুতদারদের কারসাজির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার থাকতে হবে এবং তাদের কার্যকলাপ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন যে, দেশের শান্তিকামী জনগণের শান্তি সুনিশ্চিত করার জন্যে দুষ্কৃতিকারীদের এদেশ থেকে নির্মূল করা হবে। বঙ্গবন্ধু সংসদ সদস্যদেরকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, তাদের স্ব স্ব এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সঙ্গে সব সময় যােগাযােগ রক্ষা করতে পারবেন।
চোরাচালান প্রতিরােধ কর : বঙ্গবন্ধু চোরাচালানকারীদের দমন করার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এক সের ধান দেশের বাইরে গেলেও দেশের খাদ্যের ঘাটতি বেড়ে যাবে। সীমান্তে যে কোনাে ধরনের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করার জন্য সীমান্তবর্তী গ্রামের কৃষকদের তৎপর হতে হবে। বঙ্গবন্ধু ইউনিয়ন কাউন্সিল ও পৌরসভার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠিত হতে পারে এমন পরিবেশ বজায় রাখার জন্যে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত এই রুদ্ধদ্বার সম্মেলনে রাজশাহী বিভাগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ যােগ দেন। তথ্য ও বেতার দফতরের প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর, জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার জনাব মােহাম্মদ বায়তুল্লাহ ও বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান গাজী গােলাম মােস্তফা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের পর রাজশাহী বিভাগের ডেপুটি কমিশনার ও জেলার ফুড কন্ট্রোলারদের এক সংক্ষিপ্ত বৈঠকে মিলিত হন। প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে উক্ত সম্মেলন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তারা সমস্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা করেছেন। তিনি বিস্তারিতভাবে কোনাে বিষয়ের উল্লেখ করেন নি। সম্মেলনের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে যে, বঙ্গবন্ধু নিজ নিজ এলাকায়। অবস্থান করার জন্যে এবং চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার জন্যে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাদের বলেছেন যে, স্থানীয় জনগণের সহযােগিতায় একমাত্র দলীয় নেতৃবৃন্দই সমাজ থেকে এইসব দুষ্কৃতিকারীদের দমনে সাহায্য করতে পারে।৭৩
রেফারেন্স: ২৬ নভেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ