You dont have javascript enabled! Please enable it!

আদমশুমারি কর্মীদের নির্ভয়ে নির্ভুল তথ্য প্রদান করুন- রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বলেছেন, প্রত্যেক পরিবারের ও প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেকটি মানুষের বিত্ত, বৃত্তি, শিক্ষা, দক্ষতা ইত্যাদি সকল বিষয়ে সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ ও সংকলন হবে আমাদের এবারের শুমারির লক্ষ্য। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী আদমশুমারি সম্পর্কে গতকাল রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার যােগে জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শুমারি এখন শুধু আর মাথা গুনতি নয়। তিনি আরাে বলেন, জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা ও সম্পদ সম্ভারের সংখ্যাবাচক খতিয়ান ও গুণবাচক বিশ্লেষণই আধুনিক শুমারির প্রধান উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রপতি বলেন, সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ না হয় তবে জাতীয় শুমারির প্রকৃত কল্যাণকর উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না। কারণ সে সব তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করেই সারা দেশে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির প্রকল্পসমূহ নিরূপিত হবে। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণী নিচে দেওয়া হলাে:
প্রিয় দেশবাসী,
বর্তমান যুগ পরিকল্পিত অর্থনীতির যুগ। বিশেষ করে আমাদের মতাে একটি অনুন্নত দেশের দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা ও সীমিত সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই জাতীয় উন্নতির একমাত্র পথ। কিন্তু তার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়ােজন প্রতিটি পরিবারে ও প্রতিষ্ঠানে জনশক্তির, বস্তু সম্পদের এবং কর্ম ও জীবন পদ্ধতির একটি নির্ভুল খতিয়ান নেয়া। এ সমস্তের সঠিক ও নির্ভরযােগ্য তথ্য সংগ্রহ ও সংকলনই এ যুগে জাতীয় শুমারির প্রকৃত লক্ষ্য। শুমারি এখন আর শুধু মাথা গুনতি নয়। জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা এবং সম্পদ সম্ভারের সংখ্যাবাচক খতিয়ান ও গুণবাচক বিশ্লেষণই আধুনিক শুমারির প্রধান উদ্দেশ্য। তাই প্রত্যেক পরিবারে ও প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেকটি মানুষের বিত্ত, বৃত্তি, শিক্ষা, দক্ষতা ইত্যাদি সকল বিষয়ে সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ ও সংকলন হবে আমাদের শুমারির লক্ষ্য। সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্ত যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ না হয়, তবে জাতীয় শুমারির প্রকৃত কল্যাণকর উদ্দেশ্যও সফল হতে পারে না। কারণ সে সব তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করেই সারা দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির প্রকল্পসমূহ নিরূপিত হবে। আর ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ তথ্য থেকে উদ্ভাবিত নীতি ও কার্যক্রম জাতীয় উন্নতির মহান লক্ষ্য অর্জনে সফল হয় না। তাই আমাদের জনগণের জীবনে উন্নতি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ হিসেবে এবারের শুমারির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শুমারি হিসেবেও এর তাৎপর্য অনেক। ইতােমধ্যেই এ মাসের পয়লা তারিখ থেকে এর প্রাথমিক পর্যায়ে গৃহ-সংখ্যাকরণ কাজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল থেকে তৃতীয় পর্যায়ে গৃহ ও প্রতিষ্ঠানাদি বিভিন্ন বিষয়ে শুমারির কাজ শুরু হচ্ছে। তাতে ঘর-বাড়ি নির্মাণে ব্যবহৃত দ্রব্য সরঞ্জাম পরিবারে ও প্রতিষ্ঠানে বসবাস ও কর্মরত লােকসংখ্যা, প্রতিষ্ঠানাদির প্রকারভেদ, মালিকানা, আকার, বিস্তৃতি, উৎপাদন ক্ষমতা, ব্যবহৃত শক্তির প্রকার পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। এর পরে হবে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিস্তারিত তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের কাজ এবং সে কাজ আগামী ১৯৭৪ সনের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। প্রায় সােয়া লক্ষ কর্মী এই বিরাট প্রচেষ্টায় তথ্য সংগ্রহ ও তত্ত্বাবধানের কাজে নিয়ােজিত রয়েছেন। তারা অবৈতনিক কর্মী হিসেবে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মে অংশগ্রহণ করেছেন জেনে আমি আনন্দিত হয়েছি। সর্বস্তরের কর্মীদের আন্তরিকতা, সততা, কঠোর পরিশ্রম ও স্বতঃস্ফুর্ত দেশপ্রেমের মাধ্যমে শুধু নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হবে। তাদের প্রয়ােজনীয় পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন তাদের আন্তরিক নিষ্ঠা ও পূর্ণ উদ্যমের সাথে কাজে আত্মনিয়ােগ করতে হবে। জাতীয় উন্নতির এই প্রাথমিক প্রচেষ্টায় এক গৌরবময় ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, এই কথা প্রতিনিয়ত তাদের প্রাণে প্রেরণা যােগাবে-এ বিশ্বাস আমার রয়েছে। সর্বস্তরের শুমারি কর্মচারীদের সঙ্গে জনগণ কতটা সহযােগিতা করেন তার ওপর নির্ভর করে শুমারির মতাে একটি বিপুল জাতীয় প্রচেষ্টার সাফল্য। জাতি তার সম্পদ সম্ভারের সঠিক হিসাব শুধু তখনই পাবে যখন প্রতিটি ব্যক্তি নিজের, নিজ পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সঠিক তথ্য ও উপাত্ত অসংকোচে প্রকাশ করবেন। শুমারিতে সংগৃহীত তথ্যের গােপনীয়তা দেশের আইন দ্বারা সুরক্ষিত। সে তথ্য অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। কাজেই আমি আশা করি, দেশের প্রত্যেক নাগরিক এ কথাগুলাে মনে রেখে অকপটে ও নিশ্চিত মনে এবং কোনােরকম অতিরঞ্জন বা গােপন না করে প্রকৃত তথ্যাদি শুমারি কর্মীদের কাছে প্রকাশ করবেন। আমার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে, এ কাজে নিয়ােজিত প্রত্যেক কর্মী নিঃস্বার্থ সেবার মনােভাব নিয়ে নিজের কর্তব্য পালন করবেন। সকল স্তরের শুমারি কর্মচারীবৃন্দ কর্তব্যপরায়ণতা, সৌজন্য, ধৈর্য এবং সর্বোপরি দেশাত্মবােধের সাথে কাজ করে যাবেন- এ আস্থা আমার আছে। আমি এই শুমারি কার্যক্রমের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি এবং এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রচেষ্টায় পরিপূর্ণ সহযােগিতা দানের জন্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।৪৬

রেফারেন্স: ১৬ নভেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!