You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.11.17 | বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কর্মবিমুখ ও অসৎ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযান | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কর্মবিমুখ ও অসৎ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযান

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের দুর্নীতিবাজ ও কর্তব্যবিমুখ কর্মচারীদের ওপর কঠোর আঘাত হানার জন্য প্রশাসন যন্ত্রের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছেন বলে নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযােগের ওপর নিরপেক্ষ প্রশাসনিক তদন্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই দুর্নীতিবাজ ও কর্তব্যবিমুখ। কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনকে দুর্নীতি এবং কলুষমুক্ত করার উদ্দেশ্যেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপরােক্ত নির্দেশ প্রদান করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল হতে জানা গেছে। তাছাড়া দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন যন্ত্রকে সক্রিয় করে তােলার জন্য প্রশাসন যন্ত্রে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা একান্তই প্রয়ােজন হয়ে পড়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, সম্প্রতি একটি ছাত্র সমাবেশে ভাষণদানকালে সমাজ জীবন হতে দুর্নীতিবাজদের নির্মূল করার জন্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা ঘােষণা করেছেন। একই সাথে কতর্ব্যবিমুখ কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী উক্ত ভাষণে সুস্পষ্টভাষায় বলেছেন “দুর্নীতিবাজ এবং কর্তব্যবিমুখ কোনাে কর্মচারীদের কোনাে অবস্থাতেই রেহাই দেয়া হবে না। সর্বশেষে প্রশাসনযন্ত্রের প্রতি নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র সমাবেশে দুর্নীতিবাজ এবং কর্তব্যবিমুখ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রদত্ত তার ভাষণের বাস্তবায়ন করতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলেই সংশ্লিষ্ট মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ (মােজাফফর) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (মণি সিং) সমন্বয়ে গঠিত গণঐক্যজোট প্রশাসনযন্ত্রে দুর্নীতিবাজ এবং কর্তব্যবিমুখ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বলে নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে। তাছাড়া এই তিনটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সহযােগী ছাত্র, শ্রমিক এবং কৃষক সংগঠন ও প্রশাসনযন্ত্রের দুর্নীতিবাজ এবং কর্তব্যবিমুখ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের বেশ কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মচারীর বিরুদ্ধে ইতােমধ্যেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ১১ জনেরও অধিক কর্মকর্তা, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবিসহ) অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মচারী, এছাড়া কয়েক জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এবং দু’একজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
হাজার হাজার অভিযােগ : নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে যে, দেশের বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শক টিম এবং দুর্নীতি দমন বিভাগে ইতােমধ্যেই হাজার হাজার অভিযােগ পেশ করা হয়েছে। একমাত্র দুর্নীতি দমন বিভাগেই ১০ হাজারের অধিক অভিযােগ রয়েছে। অভিযুক্তদের অধিকাংশই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী বলে জানা গেছে।
তদন্ত চলছে : জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শক টিম এবং দুর্নীতি দমন বিভাগে যে সব অভিযােগ রয়েছে তা তদন্ত করে দেখার জন্য ইতােমধ্যেই প্রশাসনিক তদন্ত অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সর্বক্ষেত্রে তদন্ত কাজ পুরােদমে এগিয়ে চলেছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই উল্লেখযােগ্য পরিমাণ তদন্ত অনুষ্ঠানের কাজে নিয়ােজিত। ব্যক্তিরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে প্রকাশ। সংশ্লিষ্ট মহল হতে জানা গেছে, নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের পরপরই দুর্নীতিবাজ এবং কর্তব্যবিমুখসহ অন্যান্য অভিযােগে অভিযুক্ত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি ব্যাপক “অপারেশন শুরু হতে বেশি দেরি হবে না বলে উক্ত মহল আশা প্রকাশ করেন।৪৮

রেফারেন্স: ১৭ নভেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ