You dont have javascript enabled! Please enable it!

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তােলাে- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতি, গুপ্তহত্যা এবং সন্ত্রাসবাদসহ সকল প্রকার সমাজবিরােধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সক্রিয় গণআন্দোলন গড়ে তােলার জন্য দল মত নির্বিশেষে। সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রােববার সকালে সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চতুর্দশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে উপরােক্ত আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, এসব রাষ্ট্র ও সমাজ বিরােধী ব্যক্তিরা দেশের অভ্যন্তরে গােলযােগ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বহু কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সরকারের সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি বানচালে গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তিনি গুপ্ত ঘাতক সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার মাটি থেকে এইসব নির্মূল করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, চোর-ডাকাতের হাতে এখানে সেখানে দেশপ্রেমিকদের গুপ্তহত্যা বিপ্লব হয় না। তিনি আরাে বলেন, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন কোনাে দেশেই সফলতা লাভ করতে পারেনি এবং বাংলাদেশেও সফলতা লাভ করতে পারবে না। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের জানা উচিত যে, গণআন্দোলন ছাড়া গণবিপ্লব হয় না আর গণআন্দোলনের জন্য জনগণের সর্বাত্মক সমর্থনের প্রয়ােজন। প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বাধীনতা বিরােধী পরগাছাদের প্রতি এই সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেন, এদের বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করা হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজবিরােধী, দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য ঔষধ দেয়া শুরু হয়েছে। তিনি এই প্রসঙ্গে নবগঠিত গণ ঐক্যজোট এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদকে তাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে গণপ্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে তােলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজবিরােধী দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হওয়া মাত্রই এক শ্রেণির লােক আইনের শাসনের আওয়াজ তুলছেন। তিনি বলেন, দেশের আইন শাসন ব্যবস্থা সজাগ থাকায় গুপ্তঘাতক সন্ত্রাসবাদীরা তাদের ঘৃণ্য কার্যকলাপ চালাতে সাহস পাচ্ছে। তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে দেশপ্রেমিকদের গুপ্ত হত্যা করা এবং আইনের শাসন একসাথে চলতে পারে না। তিনি বলেন, প্রয়ােজন হলে রাষ্ট্র ও সমাজ বিরােধী দুষ্কৃতিকারী, গুপ্তঘাতক ও সন্ত্রাসবাদীদের গুলি করে হত্যা করার অধিকার জনগণের সরকারের আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের আদর্শের চার নীতির নির্মূল করার জন্য সমাজবিরােধীরা যে সক্রিয় কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। তিনি এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার জন্য গণঐক্যজোট এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সন্ত্রাসবাদীদের প্রকাশ্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের কাছে আপনাদের আদর্শ ও কর্মসূচি ব্যাখ্যা করেন এবং পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। তিনি সন্ত্রাসীবাদীদের অগণতান্ত্রিক পন্থা পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তা না হলে সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে কঠোর আঘাত হানতে বাধ্য হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের সমর্থনে সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করতে তিনি সম্পূর্ণ সক্ষম। প্রধানমন্ত্রী ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগকে দেশের বর্তমান অবস্থা মােকাবেলা করার জন্য তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সমঝােতা আরাে বৃদ্ধি করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি এই দুটি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি গ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ, ন্যাপ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সমন্বয়ে গঠিত গণঐক্য জোট সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেন। গণঐক্য জোট দেশের কল্যাণে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করবে। তিনি দেশপ্রেমিক সংগঠনকে গণঐক্য জোটে যােগদান করার আহ্বান জানান।৩২

রেফারেন্স: ১১ নভেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!