You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.11.11 | অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যজোটের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বদান | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যজোটের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বদান

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে সফলকাম করে তােলার জন্যে জাতীয় ঐক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারােপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বুধবার সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চতুর্দশ জাতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য জাতীয় ঐক্য একান্ত প্রয়ােজন। বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে কিন্তু জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনাে আসেনি। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এই সংগ্রামকে যে কোনাে ত্যাগের হবিনিময়ে সফল করে তুলতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশে শােষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কায়েম, সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানাে, সম্পদের সুষম বণ্টন এবং মানুষে মানুষে দ্রুত ভেদাভেদ দূর করতে না পারলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে।
সমাজতন্ত্র ছাড়া উপায় নেই : প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্র কায়েমে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন সরকার দেশে সমাজতন্ত্র কায়েমের জন্য ইতােমধ্যেই বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। শােষণের চাবিকাঠির ওপর আঘাত হানা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, সমাজতন্ত্র কায়েমের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইতােমধ্যেই সরকার দেশের ব্যাংক, বীমা এবং বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি ও জাতীয়করণ নীতি বানচালের জন্য কায়েমী স্বার্থবাদীরা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, কিন্তু এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সমাজতন্ত্র কায়েমে দৃঢ় সংকল্পের কথা ঘােষণা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, চিলির আলেন্দের মতাে অবস্থা হলেও সমাজতন্ত্র কায়েম করবাে। বঙ্গবন্ধু বলেন, নীতির সাথে আপস করবাে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, চিলির মতাে ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে হতে দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজতন্ত্র কায়েমের সংগ্রামে শ্রমিক সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। তিনি কলকারখানা এবং ক্ষেতে খামারে উৎপাদন বৃদ্ধির সংগ্রাম জোরদার করার জন্য কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এই প্রসঙ্গে গ্রামে গ্রামে গিয়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সংগ্রাম পরিচালনা করার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে বলেন, দয়া করে আপনারা আপনাদের ধন সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করুন। বাংলার মাটিতে আপনাদের শােষণের দিন শেষ হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শহীদদের পবিত্র রক্তের কথা স্মরণ করে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, খুন, গণহত্যা, লুট, হাইজ্যাক প্রভৃতি সমাজবিরােধী কার্যকলাপ বন্ধ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী জানান বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে। অন্য কোনাে শিক্ষা ব্যবস্থা এদেশে চলবে না। তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য শিক্ষা কমিশনকে প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে।৩২

রেফারেন্স: ১১ নভেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ