You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.10.23 | আমাদের প্রয়ােজন কারিগরি সাহায্য- বঙ্গবন্ধু | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

আমাদের প্রয়ােজন কারিগরি সাহায্য- বঙ্গবন্ধু

টোকিও। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানি নেতৃবৃন্দের সাথে তার ফলপ্রসূ আলােচনায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দু’দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব এবং সহযােগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা আগামীকাল দেশে ফিরে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু আজ তার ‘ সম্মানে প্রেসক্লাব প্রদত্ত ভােজ সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবােধ, সমঝােতা, সহযােগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতেই আমরা জাপানের সাহায্য চাই।
অর্থনৈতিক আগ্রাসন প্রশ্নে : কোরিয়া ও থাইল্যান্ডে সাহায্যের নামে জাপান অর্থনৈতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে বলে যে অভিযােগ উঠেছে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বঙ্গবন্ধু বলেন, জাপান কোনাে উদ্দেশ্যে নিয়ে আমাদের সাহায্য করতে যাচ্ছে না। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডবাসী ও কোরিয়ানরা কী বলে তা আমি বলতে পারি না। জাপানের সাথে আমাদের অত্যন্ত ভালাে সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এতে আনন্দিত। বঙ্গবন্ধু বলেন আমরা আমাদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য সাহায্য চাই। এই ধরনের সাহায্যকে আমরা স্বাগত জানাবাে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তি রয়েছে, আমাদের প্রয়ােজন কারিগরি সাহায্য। তবে সবার ওপর আমরা জাপানের বন্ধুত্ব সহমর্মিতা ও সমঝােতা চাই। প্রশ্ন উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতিতে তিনি পুরােপুরি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, দেশে সংসদ গণতন্ত্র চালু আছে, যে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। সরকার কোনাে ধ্বংসাত্মক কাজ করতে দিতে পারে না।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রসঙ্গে : জনৈক প্রশ্নকর্তাকে বঙ্গবন্ধু বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া শান্তি এলাকা হােক আমরা এটাই চাই। কারণ আমরা ঘােষণা করেছি, ভারত মহাসাগরকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত ও শান্তি এলাকা হিসাবে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন আমাদের অগ্রগতির জন্যে আমরা শান্তি চাই। অস্ত্র কেনার জন্যে আমরা অর্থ ব্যয় করতে পারি না। বরং অস্ত্র প্রতিযােগিতা বন্ধ হওয়া উচিত।
সম্পত্তি ও দায়ভাগ : পাকিস্তানের সাথে দায় ও সম্পত্তি ভাগাভাগি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান শুধু আমাদের সম্পত্তি নিয়ে যায়নি। তারা তাদের দায়ও ফেলে গেছে। পাকিস্তান যদি সভ্য দেশ হয়ে থাকে আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়াই তার অবশ্য কর্তব্য হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশে কোনাে বিহারী নেই, আছে শুধু বাঙালি। যেসব পাকিস্তানি ও অবাঙালি বাংলাদেশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদেরকে সমান অধিকার দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা পাকিস্তানে যেতে ইচ্ছুক তারা পাকিস্তানি। তিনি বলেন, পাকিস্তানি ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে অনুমতিদানে বিলম্ব ঘটিয়ে মি. ভুট্টো কতিপয় জটিলতা সৃষ্টি করছেন।
বিদেশি লগ্নি : বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ লগ্নিকে স্বাগত জানিয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের অংশ থাকবে শতকরা ৫১ ভাগ। বাকি ৪৯ ভাগ বিদেশিদের জন্য। প্রশ্নোত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা বিদেশি দর্শন আমদানি করতে চাই না। আমাদের নিজস্ব দর্শন আছে। আমাদের আছে সংসদীয় বেগণতন্ত্র পদ্ধতি। এতে সংসদের সক্ষমতা রয়েছে। গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের নীতি আমরা অনুসরণ করছি। আশা করি এতে আমরা সফল হব।৭৩

রেফারেন্স: ২৩ অক্টোবর ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ