You dont have javascript enabled! Please enable it!

জাপানের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের প্রতি বঙ্গবন্ধু

টোকিও। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গতরাতে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, রােগ, নিরক্ষরতা। ও বেকারত্বের সমস্যার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত উন্নয়নকামী দেশগুলােকে সাহায্য করার জন্যে জাপানের অর্থনৈতিক সহযােগিতা সম্প্রসারণ করতে অনুরােধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তার সম্মানে আয়ােজিত জাপানের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও অর্থনীতিবিদদের সংগঠন অর্থনৈতিক ফেডারেশন, বৈদেশিক বাণিজ্য কাউন্সিল ও জাপানের বণিক সমিতির নৈশভােজে ভাষণ দিচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে শুধু আর্থিক সাহায্যই চায় না, বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে উন্নতমানের কারিগরি ব্যবস্থা, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তাদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি কর্মকৌশলসহ তাদের সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে চায়। তিনি উন্নত দেশের সমৃদ্ধি আর উন্নয়নগামী দেশের দারিদ্র্যের এই ক্রমবর্ধিত ব্যবধানের বর্তমান গতিধারাকে পরিবর্তিত করার ব্যাপারে জাপানের ন্যায় অতি উন্নত দেশ ও উন্নয়নগামী বাংলাদেশ উভয়েরই স্বার্থ জড়িত আছে। তিনি এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় জাপানের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনােভাবের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের মতাে দেশগুলাের বর্তমান অনুন্নত অবস্থা তাদের কৃতকর্মের ফল। এটা হলাে ঔপনিবেশিক শাসক গােষ্ঠির শােষণের পরিণতি। বঙ্গবন্ধু বলেন, বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক এশিয়াতে বসবাস করলেও এশিয়াতে সরকারি খাতের উন্নয়নে সাহায্যের পরিমাণ ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময় ধরে গড়ে মাথাপিছু মাত্র ৩.৩ ডলার। পক্ষান্তরে একই সময়ে সামগ্রিকভাবে উন্নয়নগামী দেশসমূহের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ছিল ৪.২৭ ডলার। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে চরম বঞ্চনা ও নগ্ন শােষণের শিকার হতে হয়েছে। এর পর মুক্তিযুদ্ধকালে অর্থনীতি ও জনগণের ওপর যে তান্ডব নেমে এসেছিল তাতে অবস্থা আরও সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পাঁচসালা পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, তাদের প্রধান সমস্যা হলাে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। এবং এর জন্যেই জাপানের সাহায্য বাংলাদেশের কাছে অতি মূল্যবান। তিনি তেল, গ্যাস আহরণসহ যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে জাপানের সহযােগিতা চান। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সাথে বলেন, তার সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ছাড়া কোনাে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রায়ত্ত করবে না বলে ইতােমধ্যেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন।৬০

রেফারেন্স: ১৯ অক্টোবর ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!