You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনামঃ ঢাকায় গণপরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে বিতর্ক

সুত্রঃ পাকিস্তান গণপরিষদ

তারিখঃ ২৪শে ফেব্রুয়ারী ১৯৪৮

প্রফেসর রাজ কুমার চক্রবর্তী (পূর্ব বাংলা: সাধারন)

স্যার, আমাদের এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তাই, দেশের অধিকাংশ কিংবা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনমানুষের অনুভূতি এবং ইচ্ছেকে সম্মান করা আমাদের কর্তব্য। আপনি জানেন, পুরো পাকিস্তানের দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ পূর্ব পাকিস্তানের। নিজেদের রাজধানীতে সংসদীয় কমিটিতে কিংবা সংসদ অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু আসন থাকাটা তাই খুবই স্বাভাবিক। এই সংশোধনীতে অন্যান্য দফার সাথে এই বিষয়ের পক্ষে দুইটি দফা আছে। এর মানসিক প্রতিক্রিয়াও আছে। এমন একটা ধারণা জন্মেছে যে এই নতুন পাকিস্তানি ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান নিগৃহীত হচ্ছে। যদি রাজধানীতে সংসদের অধিবেশন ও কমিটির কিছু মিটিং এ আমরা বসতে পারি, তবে এই ধারণা দূর হয়ে যাবে এবং ভুল বুঝাবুঝিরও কোন অবকাশ থাকবে না। দ্বিতীয়ত স্যার, আমার সংশোধনী যদি মানা হয় তবে এর কিছু ফলও থাকবে। সংসদ অধিবেশনের এই সেশন যদি পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়, তবে এটি জনগণের স্বার্থের পক্ষে সর্বোত্তম হবে। সংসদীয় ব্যব্স্থা সম্পর্কে এবং একটা দেশের সরকার কিভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা অবহিত হতে পারবে।

  পাকিস্তান রাষ্ট্রের নেতারা এই সকল উপলক্ষে যদি পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণ করে, তবে এখানকার জনগণের সুযোগ মিলবে তাদের সংস্পর্শে আসার এবং নেতাদের উপস্থিতি তাদেরকে উৎসাহিত করবে। সুতরাং, তাই আমি বলব আমার সংশোধনীর শিক্ষামূল্যটা যেন অগ্রাহ্য করা না হয়। আমার অনুমান বাস্তব প্রয়োগের অজুহাত দেখিয়ে আমার সংশোধনীর বিরূদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে; তবে কী, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। ভারত ভাগের আগে কেন্দ্রীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল দিল্লি এবং সিমলাতে; এবং কিছু প্রাদেশিক অধিবেশন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নিঃসন্দেহে সেখানে কিছু সমস্যা ছিল, তা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি, কিন্তু, আমি যে প্রস্তাবনা গুলো রাখছি সেগুলোর বাস্তবায়ণের পথে এগুলো বাধা হয়ে না দাঁড়ানোই উচিৎ। স্যার আমার সংশোধনীটা বড় নিরীহ ধরণের। ‘অধিবেশনের সকল কার্যাবলী রাষ্ট্রপতি ভিন্নমত না দিলে করাচিতেই অনুষ্ঠিত হবে’- এমন একটা আইন গৃহীত হয়েছে। সুতরাং, রাষ্ট্রপতির ভিন্নমত পোষণ করার জায়গা রয়েছে। আমার এই সংশোধনী যদি গৃহীত হয় তবে রাষ্ট্রপতি নিয়মের কোন লঙ্ঘণ করছেন না, বরঞ্চ, তা হলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মানসিকতায় তা বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে। এটি খুবই বিনীত একটা সংশোধনী এবং আমি আশা রাখি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছে এবং অনুভূতিকে স্বীকার করে আমার সংশোধনীটা গৃহীত হবে…..।

জনাব তমিজউদ্দিন খানঃ

এই সংশোধনী উত্থাপনকারী মাননীয় সদস্যের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে, তবুও আমি মনে করি এক্ষেত্রে আমরা আবশ্যিকভাবে কিছু বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হব। অর্থের ব্যাপারটা এখানে একটা বড় প্রশ্ন। আমি জানি না ওখানে সংসদের একটি অধিবেশন বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহণ করতে সরকারের কী ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

এক্ষেত্রে সেখানে একটা ভালো রকম অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। অপরপক্ষে, অধিবেশনটি যদি ঢাকায় অনুষ্ঠিত করতে হয়ই, সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাতেই প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। একারণেই, আমি মনে করি, ঢাকায় একটি অধিবেশন বসানোর গ্রহণযোগ্যতা এবং ফলপ্রসূতা যদি মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট সত্য বলেই মনে হয় তবে এই সংশোধনী ছাড়াই মাননীয় উত্থাপনকারীর মনের আশা পূরণ হতে পারে। ফলে, এ সংশোধনীর খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে আমি বোধ করি না।

বেগম শায়েস্তা সোহরাওয়ার্দী ইকরামুল্লাহ(পূর্ব বাংলাঃমুসলিম)

স্যার, সদস্যদের পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার থেকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে আসতে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি, যেহেতু তারা সংখ্যায় বেশি। আবাসন এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য আমি পূর্ব পাকিস্তানের কোন অজগ্রামের কথা বলছি না বরং বলছি ঢাকার কথা, যেখানে, আমি মনে করি সংসদের স্থান সংকুলানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে। যা হোক, আমার মনে হয় মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা বাস্তব সমস্যাগুলোকে দূর করে দিবে। পূর্ব পাকিস্তানীদের মধ্যে এমন একটা মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে যে, পূর্ব পাকিস্তান অবহেলিত হচ্ছে এবং কেবলই পশ্চিম পাকিস্তানের একটি উপনবেশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এই মনোভাব দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই আমাদের করা দরকার। এই সংকীর্ণ প্রাদেশিকতার ব্যাপারটি অবশ্যই রাষ্ট্রের বিবেচনায় আনা দরকার। সত্য হোক আর অসত্য, কোন অঙ্গরাজ্যকে আমাদের এমন সুযোগ দেওয়া উচিত নয় যাতে তারা নিজেদের অবহেলিত বলে ভাবতে পারে। পশ্চিম পাকিস্তানী জনগনের সাথে আমি বহুদিন ধরে থেকেছি এবং আমি জানি, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানীরা জানে না বললেই চলে। সেজন্যই আমি বিশ্বাস করি যে বছরে অন্তত একটি মিটিং পূর্ব পাকিস্তানে হওয়া উচিৎ। বর্তমানে  আমরা আরও বহুমূখী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। সুতরাং, বর্তমানের জন্য এই সংসদের অধিবেশন কেবল পশ্চিম পাকিস্তানেই বসুক এবং পরবর্তীতে যখন এটি আইন পরিষদে পরিণত হবে তখন বছরে অন্তত একটি অধিবেশন পূর্ব পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত করা হোক।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!