জাতিসংঘভুক্তির পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলার এখতিয়ার পাকিস্তানের নেই
ঢাকা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, বাংলাদেশ ছাড়া জাতিসংঘ অসম্পূর্ণ থাকবে। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ মনে করে যে, বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নটি মােকাবেলা করবে জাতিসংঘ এবং সনদের নীতি অনুযায়ী সে তার দায়িত্ব পালন করবে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব ভুট্টোর বক্তৃতার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, জাতিসংঘের বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের সাথে জনাব ভুট্টো ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দির প্রশ্নটি জড়িয়েছেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন যে, দিল্লি চুক্তিতে এ ব্যাপারটি মােকাবেলা করা হয়েছে। ওই প্রশ্নের মােকাবেলা করার জন্যে ওই চুক্তিকে একটি কাঠামাে দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, দিল্লি চুক্তির কাঠামাের বাইরে এই প্রশ্ন তােলার চেষ্টা করে কোনাে কাজ হবে না। প্রকৃতপক্ষে এর ফল উল্টো হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের প্রশ্নটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন জাতিসংঘ এবং এর বিরুদ্ধে কিংবা পক্ষে বলার কিছুই নেই। ড. কামাল হােসেন বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে বলতে পারি, পাকিস্তানের সাথে সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে আমরা অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য কাজ করছি। তিনি বলেন, সব দেশের সাথে মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন এবং শান্তির পরিবেশ গড়ে তােলার জন্য কাজ করাই হচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণনীতির একটি অংশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, ১০৭টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বহু জাতিসংঘ সংস্থার সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা জোট নিরপেক্ষ গােষ্ঠীর পূর্ণ সদস্য এবং আমরা মনে করি যতদিন আমরা জাতিসংঘের বাইরে থাকবাে ততদিন এটি অসম্পূর্ণ থাকবে। বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে বিরােধিতা করে পাকিস্তান দিল্লি চুক্তি লঙ্ঘন করছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যা দিল্লি চুক্তির সৃষ্ট পরিবেশ থেকে এটি কিছুটা সরে গেছে। চীন পুনরায় ভেটো প্রয়ােগ করবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আবার বলছি, সমগ্র জাতিসংঘ এবং তার সব সদস্যরা এ ব্যাপারটি মােকাবেলা করবে। সুনিশ্চিতভাবে এ ব্যাপারটি জাতিসংঘ মােকাবেলা করতে সক্ষম বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারটি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ সন্তুষ্ট। আটক ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশে ফেরার ব্যাপারে অর্থ সাহায্যর জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব এবং জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন বিশ্বের কাছে বার বার যে আবেদন জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সােভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক একটি জাহাজ ও বিমান প্রদানের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, অন্যান্য দেশও অনুরূপভাবে সাড়া। দেবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশেষভাবে এই ঘটনাবলিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আমরা মনে করি উপমহাদেশের দেশগুলাের মধ্যেকার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দিল্লি চুক্তি হচ্ছে প্রধান পদক্ষেপ। তিনি বলেন যে, দিল্লি চুক্তির ফলাফল হিসেবে গঠনমূলক তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে এবং এ ব্যাপারটিকে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ স্বাগত জানিয়েছে। বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন প্রতিটি ব্যক্তি এর সমর্থক।৭৫
রেফারেন্স: ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ