সংবিধানে দ্বিতীয় সংশােধনী পাশ
প্রয়ােজন দেখা দিলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘােষণার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দানের জন্য আনীত সংবিধানে দ্বিতীয় সংশােধনী বিল বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। সংশােধনী বিলের পক্ষে ২৬৭ ভােট দেয়া হয়। ৬ জন বিরােধী ও স্বতন্ত্র সদস্য বিলকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে আখ্যায়িত করে বিলটি বিবেচনার জন্য গৃহীত হওয়ার পর সংসদ কক্ষ ত্যাগ করেন। তারা আর সংসদে ফিরে আসেননি। সংবিধানের প্রথম সংশােধনী বিল বিগত ১৫ জুলাই জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। জরুরি অবস্থা ঘােষণার বিধানাবলিতে রয়েছে যে, “রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এখন জরুরি অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা আভ্যন্তরীণ গােলযােগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোনাে অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি জরুরি অবস্থা ঘােষণা করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘােষণার বৈধতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের প্রয়ােজন হইবে।” এই সংশােধনী বিল গৃহীত হওয়ার ফলে সংসদ নিবর্তনমূলক আটকের বিধান সংবলিত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পেয়েছে। সংসদের দুই অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়ে ষাট দিন হতে বর্ধিত হয়ে একশ কুড়ি দিন হয়েছে, সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদের বিধানের প্রয়ােগ হতে সংবিধানের সংশােধন সমূহ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর আগে বিরােধী ও স্বতন্ত্র দলীয় জনাব আতউর রহমান, সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মােহাম্মদ সালাহউদ্দিন, জনাব ময়নুদ্দিন আহমদ, জনাব আব্দুস সাত্তার, শ্রী চাই থােয়াই রােয়াজা এবং জনাব আবুল হাসানাত মােহাম্মদ আব্দুল হাই সংবিধান দ্বিতীয় সংশােধনী বিল এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রেরণের প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সংসদে বাতিল হয়ে যায়। প্রস্তাবের পক্ষে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব আতাউর রহমান খান বলেন, সংবিধানের ৬৩ ধারায় মােটামুটি জরুরি অবস্থা ঘােষণার ব্যবস্থা রয়েছে। এর পরও নতুন সংশােধনী বিল কেন আনা হচ্ছে? বিলে অন্যান্য বক্তব্যর মধ্যে আভ্যন্তরীণ গােলযােগ দমনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘােষণার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দানের ব্যাপারটি বলা হয়েছে। আভ্যন্তরীণ গােলযােগ দমানাের জন্য যদি জরুরি ক্ষমতা গ্রহণের প্রয়ােজন হয় তবে তা প্রশাসন ব্যবস্থার চরম অযােগ্যতার প্রমাণ বহন করেছে। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থার সময় মৌলিক অধিকার বিধান বাতিলেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর শিকার হবে বিরােধী দল। তিনি এই বিলের বিরােধিতা করেন। ভাঃ ন্যাপের জনাব সালাহউদ্দিন বিলটিকে ‘জঘন্য বিল’ বলে অভিহিত করেন। আইনমন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধর বিলের বিরুদ্ধে সমালােচনার জবাব দান প্রসঙ্গে বলেন যে, বিশ্বের প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে যা আছে তা আমাদের সংবিধানে সংযােজন করার জন্যই এই বিল আনা হয়েছে। এটা নতুন কোনাে ব্যাপার নয়। এটা অত্যন্ত মামুলি ব্যাপার। তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংবিধানে জরুরি অবস্থা ঘােষণার বিধান ছিল না। এর ফলে সংবিধানে যে শূন্যতা ছিল তা পূরণের জন্যই এই বিল আনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, দেশে জরুরি অবস্থা ঘােষণার মতাে অবস্থার সৃষ্টি হােক এ কারাে কাম্য হতে পারে না। কিন্তু জরুরি অবস্থা ঘােষণার মতাে অবস্থার সৃষ্টি হলে সুষ্ঠুভাবে যাতে পরিস্থিতির মােকাবেলা করা যায় তার জন্য সংবিধানে এই ধারা সংযােজনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিনা কারণে জরুরি অবস্থা ঘােষিত হতে পারে তা বর্তমান সরকার চিন্তাও করতে পারে না। রাষ্ট্র স্বাধীনতা রক্ষা ও জাতির স্বার্থেই জরুরি অবস্থার ঘােষণা করতে হবে। এই ধারার বিরােধিতা অচিন্ত্যনীয়। সংবিধান সংশােধনী বিল গৃহীত হওয়ার পর সংসদের অধিবেশন আজ শুক্রবার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত মূলতবী হয়ে যায়।৬৯
রেফারেন্স: ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ