You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.09.10 | বাংলাদেশকে জাতিসংঘের বাইরে রাখার অধিকার কারাে নেই- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশকে জাতিসংঘের বাইরে রাখার অধিকার কারাে নেই- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ৭৬ জাতির চতুর্থ জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনকে একটি বিরাট সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। আলজিয়ার্সে শান্তি সফল অন্বেষা শেষে সােমবার ঢাকায় ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু তেজগাঁও বিমানবন্দরে এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে সাদর অভ্যর্থনা জানানাে হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা সাড়ে সাত কোটি লােকের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আমরা জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছি। বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য ত্রুটি যদি থাকে তা জাতিসংঘের, বাংলাদেশের জনগণের নয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশকে জাতিসংঘের বাইরে রাখার অধিকার কারাে নাই। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে গণচীনের ভূমিকা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, গণচীন একটি বৃহৎ শক্তি। আমার কিছুই বলার নাই। আমি দাবি করছি, বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য করা হােক। আমরা সাড়ে সাত কোটি লােকের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে গণচীন যদি আবার ভেটো দেয় তার দায়িত্ব তাদের ওপরেই বর্তাবে, বাংলাদেশের ওপর নয়। গণচীন যদি আবার ভেটো দেয় তাহলে তারা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি লােককে অবজ্ঞা করবে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে কোনাে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কি না বাংলাদেশের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনারা আমার রাজনৈতিক জীবনধারা সম্বন্ধে জানেন। বিপদ ও প্রতিবন্ধকতা আমার নিয়ত সঙ্গী এবং সংগ্রাম করে আমি তা অতিক্রম করেছি। আমি উৎকৃষ্টতমের জন্য আশাবাদী এবং নিকৃষ্টতমের জন্য প্রস্তুত। আলজিয়ার্স শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, এ প্রথমবার এতােগুলাে দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যােগদান করেছিলেন। সম্মেলনের বিবিধ সমস্যা বিশেষ করে জোট নিরপেক্ষ নীতি সম্পর্কে আলােচনা হয়েছে। বিশ্বের গরিষ্ঠসংখ্যক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা একত্রিত হয়ে সম্মেলনে সুপারিশ রেখেছেন, বিশ্ব শান্তির পক্ষে করেছেন ঘােষণা। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমি বিশ্ব। শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিকে উচ্চারণ করেছি। দৃপ্ত কণ্ঠে বক্তব্য রেখেছি আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ার শােষণের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু বলেন, আলজিয়ার্স সম্মেলন একটি বিরাট সাফল্য বয়ে এনেছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার সপক্ষে বিশ্বের শােষিত জনগণ সেখানে সম্মিলিত কণ্ঠে বলিষ্ঠ দাবি উচ্চারণের সুযােগ পেয়েছে। সম্মেলনে রাখা হয়েছে সুস্পষ্ট ঘােষণা। বঙ্গবন্ধু বলেন, শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ অস্ত্র প্রতিযােগিতা বন্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বের জনমত সংগঠনের দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ঘােষণা করেছে, অস্ত্র প্রতিযােগিতা বন্ধ করে এর জন্যে ব্যয়িত অর্থ বিশ্ব। মানবতা ও অনুকূল কল্যাণের প্রয়ােজনে ব্যবহার করা হােক। বঙ্গবন্ধু বলেন, শীর্ষ সম্মেলনে। বাংলাদেশ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘােষণা করেছে, আমরা বিশ্বের সকল শােষিত মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামেরও পাশে রয়েছে। বাংলাদেশ ঘােষণা করেছে, বিশ্বে দুটি শক্তি রয়েছি। একটি শােষক ও অপরটি শােষিত। শীর্ষ জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রবর্গের গ্রুপে বাংলাদেশকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযােগ দানের সুপারিশের জন্য বঙ্গবন্ধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, কম্বােডিয়ার প্রিন্স নরদম সিহানুককে আমরা বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি সর্বদা স্বাগত! বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বােয়িং ৭০৭ বিমানটি বেলা ১:৩৫ মিনিটে বিমান বন্দর স্পর্শ করে। বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ; আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ; কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিবর্গ, পদস্থ সরকারি কর্মচারী ও গণ্যমান্য নাগরিকবৃন্দ। বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন মহল থেকে মাল্যভূষিত করা হয়। বিমান থেকে সিঁড়িতে পা রাখার পর বঙ্গবন্ধুকে প্রথম অভিনন্দন জানান। শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করেন। সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর ছােট ছেলে রাসেলও ছিল। এরপর বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর তিন প্রধান। সম্মিলিত বাহিনীর একটি কনটিনজেন্ট বঙ্গবন্ধুকে প্রদান করে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন এবং অন্যান্য সফর সঙ্গীরাও ফিরে এসেছেন।৩৭

রেফারেন্স: ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ