You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশকে জাতিসংঘভুক্তির আহ্বান

আলজিয়ার্স। জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রবর্গের প্রতিনিধিরা আজ একটি রাজনৈতিক ঘােষণার খসড়া প্রণয়ন করেছেন। এই খসড়ায় বাংলাদেশকে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার আহ্বান জানানাে হয়েছে। খসড়ায় সম্মেলনে যােগদানকারী প্রতিনিধিবর্গ সারা বিশ্বে যে পারস্পরিক সমঝােতা গড়ে উঠেছে তাকে অভিনন্দন জানান। তবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে এখনও বহু দেরী বলে তারা সতর্ক বাণীও উচ্চারণ করেন। সম্মেলনে যােগদানকারী বিভিন্ন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত কমিটি কয়েকদিন আলাপ আলােচনার পর আজ রাতে খসড়া ঘােষণাটি প্রণয়ন করেন। চূড়ান্ত অনুমােদনের জন্য আগামীকাল এটি শীর্ষ সম্মেলনে পেশ করা হবে। ঘােষণায় প্রাচ্য পাশ্চাত্য সমঝােতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ এখনও বৈদেশিক হস্তক্ষেপ, দখল, উপনিবেশবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং ইহুদিবাদের রাহু মুক্ত হতে পারেননি বলে এতে মন্তব্য করা হয়। ঘােষণায় বলা হয়, প্যারিস শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্য এবং ইন্দোচীন। পরিস্থিতির অবনতি, কম্বােডিয়ায় বােমা বর্ষণ, আফ্রিকায় নয়া ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের উদ্ভব এ কথাই প্রমাণ করে যে, শান্তি এখনাে বহু দূরে। ঘােষণায় বর্ণ বৈষম্যবাদ, ক্ষমতার রাজনীতি, অর্থনৈতিক শােষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে উত্তরােত্তর যে বৈষম্য বাড়ছে তাতেও ঘােষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এটাও শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে একটি ব্রিাট হুমকি বলে মন্তব্য করা হয়। জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে আজ অর্থনৈতিক সনদটি অনুমােদিত হয়। এই সনদে প্রতিটি রাষ্ট্রকে তার নিজস্ব কাঁচামাল এবং শিল্প কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত করার অধিকারকে সমর্থন জানানাে হয়েছে। বহুজাতিভিত্তিক সংস্থার কার্যক্রমকে সনদে মারাত্মক আক্রমণ চালানাে হয়। সম্মেলনের অর্থনৈতিক কমিটি গত রাতে অর্থনৈতিক সনদটি অনুমােদন করেন। সনদে সাম্রাজ্যবাদের। বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানাে হয় এবং একে জনগণের মুক্তি এবং সমৃদ্ধির পথে অন্তরায় বলে বর্ণনা করা হয়। নিজস্ব সম্পদ এবং বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রায়ত্ত করে কোনাে দেশ যদি কারাে অর্থনৈতিক বয়কট অথবা রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হয় তাহলে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলাে তাকে সাহায্য করবে বলে সনদে উল্লেখ করা হয়। জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যােগদানকারী প্রতিনিধিরা আজ রাতে সর্বশেষ অধিবেশনে মিলিত হন। এতে মন্ত্রী পর্যায়ের দুটো কমিটির প্রণীত রাজনৈতিক ঘােষণা এবং অর্থনৈতিক সনদ চূড়ান্ত অনুমােদন লাভ করে। প্রাচ্য পাশ্চাত্য সমঝােতা স্থাপনে উপরােক্ত দুটো দলিল সেতুবন্ধন রচনা করবে বলে সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়।৩৪

রেফারেন্স: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!