You dont have javascript enabled! Please enable it! 1947 | পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মসূচি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – প্রথম খণ্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মসূচি পুর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ১৯৪৭

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংগঠনী কমিটি পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজের খেদমতে নিম্নোক্ত কর্মসূচী পেশ করিয়াছেনঃ

ছাত্র লীগের আর্দশ উদ্দেশ্য

১।            (ক) পূর্ব পাকিস্তানে বিভিন্নমুখী প্রতিভা সৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ তৈয়ার করা

                (খ) বিভিন্ন রকমের কারিগরি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারী ও ধাত্রীবিদ্যা শিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করা।

২। পাকিস্তানকে আভ্যন্তরীণ ও বহিঃশক্রদের কবলমুক্ত করা এবং সর্বশক্তি দিয়ে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

৩।            (ক) স্বার্থন্বেষী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম এবং ছাত্রসমাজকে তাহদের স্বার্থসিদ্ধির যন্ত্ররূপে চালিত হইতে না দেওয়া

(খ) ছাত্রসমাজকে দলীয় রাজনীতি হইতে মুক্ত রাখা

৪।            (ক) নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা

(খ) ছাত্রসমাজকে পরস্পর সহযোগিতার ভিত্তিতে অবিচ্ছেদ্যভাবে একত্রীভূত করা

(গ) ছাত্রসমাজের ন্যায্য দাবীদাওয়াগুলিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা

(ঘ) ছাত্রসমাজকে কৃষ্টি ও আধুনিক রাজনৈতিক আন্দোলনের সংস্পর্শে আনিয়া নৈতিক ও চারিত্রিক বিপ্লবের সৃষ্টি করা

(ঙ) জাতি ও দেশের কল্যাণের জন্য ছাত্রসমাজের বিক্ষিপ্ত কর্মশক্তিকে সুসংবদ্ধ ও কেন্দ্রীভূত করা

৫। ইসলামিক নীতির উপর ভিত্তি করতঃ জাতীয় দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সমতা আনয়ন করা

৬। পাকিস্তানের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমানাধিকারে ভিত্তিতে সৌহাৰ্দ্দ্য ও মিলনের পথ সুপ্রশস্ত করা

৭। জনসংখ্যার অনুপাতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানীদের ন্যায্য দাবীদাওয়াগুলির সুনিশ্চিত ব্যবস্থা করিয়া দিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মিলনকে সুদৃঢ় করা

৮। সরকারের জনকল্যাণকর কৰ্ম্মপদ্ধতিকে সমর্থন করা এবং গণস্বার্থবিরোধী কৰ্ম্মপন্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা

৯। প্রাপ্তবয়স্কদের সার্ববজনীন ভোটাধিকারের দাবী

১০। দুনীতি, স্বজনপ্রীতি, মুনাফাকারী ও চোরাকারবারীদের উচ্ছেদ সাধন এবং ব্যক্তিকে কেন্দ্র করিয়া ছাত্র আন্দোলন পরিচালনার যে রেওয়াজ প্রচলিত আছে, তার ধ্বংস সাধন।

ছাত্রলীগের দাবী

১। আজাদী লাভের পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পাঠ্য পুস্তকের আমূল পরিবর্তন

২। অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রচলন ও বর্তমান শিক্ষাসঙ্কোচ নীতির প্রতিরোধ

৩।            (ক) বিনা ব্যয়ে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষার প্রবর্তন

(খ) পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের যুবকদের বিমান, নৌ, স্থল প্রভূতি সামরিক শিক্ষা প্রদানের জন্য অনতিবিলম্বে পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন (গ) পাকিস্তান নৌ বিভাগের সদর দফতর চট্টগ্রামে স্থানান্তরিতকরণ

৪। কারিগরি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারী, ধাত্রীবিদ্যা প্রভৃতি প্রসারের অধিকতর সুবন্দোবস্তকরণ

৫।            (ক) স্বল্পব্যয়ে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা

(খ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে অধিকতর সরকারী সাহায্য

(গ) শিক্ষায়তনগুলিতে উপযুক্ত বেতন দিয়া উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ

(ঘ) পল্লী অঞ্চলকে শিক্ষাকেন্দ্ররূপে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে মফস্বল শিক্ষায়তনগুলির জন্য অধিকতর ছাত্রাবাসের প্রতিষ্ঠা

(ঙ) গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য শিক্ষায়তন ও ছাত্রাবাসগুলিতে অধিকতর ফ্রি ষ্টুডেণ্ডশিপ এবং বৃত্তির সংখ্যা বাড়াইয়া দেওয়ার ব্যবস্থা

(চ) শিক্ষায়তনসমূহের পাঠাগারগুলিতে ইসলামিক কৃষ্টি ও ঐতিহ্যমুলক গ্রন্থের সমাবেশ

(ছ) বিনাব্যয়ে ছাত্রদের চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা

৬। নারীশিক্ষা প্রসারের উপযুক্ত ব্যবস্থা

৭। পূর্ব পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজসমূহে বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান ও পরীক্ষা গ্রহণের আশু ব্যবস্থা

৮। শিক্ষায়তনগুলিকে স্বায়ত্তশাসনমূলক ক্ষমতা প্রদান

 ৯। শিক্ষায়তন ও ছাত্রাবাসগুলিতে স্বায়ত্তশাসনমূলক ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার

১০। শিক্ষায়তনসমূহে পুলিশের অন্যায় ও অযথা হস্তক্ষেপ বন্ধ করিয়া দিয়া শিক্ষায়তনগুলির পবিত্রতা রক্ষা করা। নাইমউদ্দীন আহমদ আহবায়ক পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ*

 

ছাত্রাবাস ও একোমোডেশন সমস্যাযুক্ত স্কুল কলেজের ছাত্রবন্ধুদের “কেন্দ্রীয় একমোডেশন ও কমিটি অব একশনের” সহিত যোগাযোগ স্থাপন করিবার জন্য অনুরোধ জানান হইতেছে।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই বাংলাদেশ মুসলিম লীগের দুটি অংশ কাজ করতে থাকে। একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন খাজা শাহাবদীন ও খাজা নাজিমুদ্দীন এবং অন্যটির নেতৃত্ব ছিলেন আবুল হাশিম ও সোহরাওয়াদী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ছিল হাশিম-সোহরাওয়াদী সমর্থক। পরবর্তীকালে এই সংগঠন থেকেই আওয়ামী লীগের বহু কমী সৃষ্টি হয়।