You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.09.08 | দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে শান্তি এলাকা ঘােষণা করুন- বঙ্গবন্ধুর আহ্বান | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে শান্তি এলাকা ঘােষণা করুন- বঙ্গবন্ধুর আহ্বান

ঢাকা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে শান্তি এলাকা ঘােষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ রাতেই আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ভাষণ দানকালে তিনি এই আহ্বান জানান। বেতার সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রবর্গকে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অসাধারণ গুরুত্বের কথা আবার স্মরণ করিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে শান্তি এলাকা ঘােষণার মাধ্যমে স্থায়ী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হবে।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে আলােচনা : আলজিয়ার্স থেকে এনা জানাচ্ছেন, জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানব জাতির শান্তি এবং সমৃদ্ধির অন্বেষায় বিশ্বের বিভিন্ন নেতার সাথে সাক্ষাৎ অব্যাহত রেখেছেন। ইতােমধ্যেই তিনি সৌদি আরবের বাদশা ফয়সল, যুগােশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনােয়ার সাদাত, ওগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদিআমিন, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফি এবং লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছেন। শান্তি নিশ্চিতকরণ এবং বৃহৎ শক্তিবর্গকে মানব জাতির ধ্বংস ডেকে আনা থেকে বিরত করার জন্য বঙ্গবন্ধু জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্রবর্গের সুসমন্বিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব আরােপ করেন। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং এ ব্যাপারে নয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের অবদানের কথা তিনি বিভিন্ন নেতাকে সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশের ওপর কাউকে আধিপত্য বিস্তার করতে দেয়া হবে না। বাদশা ফয়সলের সাথে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলাপ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু উপমহাদেশে উত্তেজনা হ্রাসে বাংলাদেশের। প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। আলােচনার বিষয়বস্তু পুরােপুরি জানা যায় নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই নয়া স্বাধীন রাষ্ট্র সম্পর্কে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলােতে উন্নততর ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তির সংগ্রামে বাংলাদেশ আরবদের পাশে থাকবে। ইহুদি সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সহযােগিতা কামনা করলে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা পাশে আছি। সম্মেলন স্থানের মিশরীয় ভিলায় বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট সাদাতের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। একটু পরেই প্রেসিডেন্ট সাদাত সেখানে আসেন। তিনি গভীর আবেগে বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর উভয় নেতা তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা এবং পারস্পরিক সহযােগিতার বিষয়ে আলাপ আলােচনা করেন। উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন তার স্ত্রী এবং ছােট্ট ছেলের সাথে বঙ্গবন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর তারা রুদ্ধদ্বার কক্ষে কিছুক্ষণ আলাপ আলােচনা করেন। লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফী-বঙ্গবন্ধুর আলাপ আলােচনার বিষয়বস্তু জানা যায় নি। সম্মেলন কক্ষে বঙ্গবন্ধু নাইজেরিয়ার ইয়াতুবু গাওয়ান, তাঞ্জানিয়ার জুলিয়াস নায়ারের, কিউবার ফিডেল ক্যাস্ট্রো এবং মালয়েশিয়ার তুন আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ আলােচনা করেন। গভীর রাতে অধিবেশন শেষে বঙ্গবন্ধু শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ভিলায় উপস্থিত হন। সেখানে শ্রীমতী গান্ধী বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতাকে নৈশভােজে আপ্যায়িত করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।২৮

রেফারেন্স: ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ