You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.08.19 | রাষ্ট্রবিরােধী শক্তি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চরম আঘাত হানা হবে- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

রাষ্ট্রবিরােধী শক্তি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চরম আঘাত হানা হবে- বঙ্গবন্ধু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। একদিন বা দুই দিনে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হলে আমাদের ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। বঙ্গবন্ধু রবিবার সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্র লীগের জাতীয় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি শেখ শহীদুল ইসলাম। প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধন এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তােলাই তার জীবনের ধ্যান জ্ঞান মন্ত্র। তিনি প্রসঙ্গত বলেন যে, দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসেনি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে সমাজতন্ত্রই উত্তম পন্থা।
চরম আঘাত হানা হবে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আরাে বলেন, ৩০ লক্ষ লােকের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত এখনাে চলছে। রাষ্ট্র বিরােধীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে। তিনি চক্রান্তবাজদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, রাষ্ট্র বিরােধীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই চরম আঘাত হানা হবে। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র এবং সমাজ বিরােধীদের বিরুদ্ধে ছাত্র এবং দেশের যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণকে তার বিরুদ্ধে সুসংগঠিত থাকতে হবে। অন্যথায় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
গণকমিটি গঠন করাে : প্রধানমন্ত্রী দেশের শত্রু সমাজবিরােধী এবং গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে গণপ্রতিরােধ গড়ে তােলার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। ন্যাপ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের সম্মিলিতভাবে প্রতি ইউনিয়নে গণকমিটি গঠনের আহ্বান জানান। তিনি প্রসঙ্গত বলেন, জনগণ যদি এগিয়ে না আসে তবে কেবল সরকারের একার পক্ষে সমাজ বিরােধীদের দমন করা সম্ভব নয়।
আত্মসমালােচনা ও আত্মশুদ্ধির আহ্বান : জাতির পিতা ছাত্র সমাজ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের আত্মসমালােচনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আত্মশুদ্ধি না করে অন্যের সমালােচনা করা উচিত না। তিনি বলেন, একমাত্র পরিশুদ্ধ সােনার মানুষের মাধ্যমেই সােনার বাংলা গঠন সম্ভব। তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশটা চোরে ভরে গেছে। যা কিছু দেয় তা চোরেরা হজম করে ফেলে। তিনি ছাত্র সমাজকেও পরিশুদ্ধ কর্মী এবং চরিত্রবান মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত তিনি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদকে পরীক্ষায় নকলবাজি বন্ধ করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানান।
সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির নিন্দা: বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে তাদের নিন্দা করে বলেন যে, এরা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য জীব। তিনি আরও বলেন, কতিপয় লােক হীনস্বার্থ সিদ্ধির আশায় এবং জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানাের জন্য সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি চিরকাল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এসেছি। কিন্তু বাঙালি জাতির ঐক্যে ফাটল ধরাতে দিব না। তিনি দেশের সকল শ্রেণির জনগণকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তােলার আহ্বান জানান।
গণতন্ত্র ভােগের জন্য গণতন্ত্রী হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্রের কথা এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রসঙ্গত বলেন, যারা একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলছে অন্যদিকে অস্ত্র প্রয়ােগের হুমকি দিচ্ছে তাদের জন্য গণতন্ত্র নয়। বঙ্গবন্ধু বলেন, গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় কেউ যদি রাষ্ট্রবিরােধী কথা বলে তাদের দলে আমি নেই। অগণতান্ত্রিক দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার জন্য কেউ যদি আন্দোলনের হুমকি দেয় তাদের দলেও আমি নেই। তিনি বলেন, আন্দোলনেই আমার জন্ম। দেশের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে স্বাধীনতা আছে বলেই কেউ কেউ প্রকাশ্য জনসভায় সরকার উৎখাত ও অস্ত্র প্রয়ােগের হুমকি দেখাচ্ছে।৫৮

রেফারেন্স: ১৯ আগস্ট ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ