উন্নত ও বিত্তশালী দেশসমূহের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সতর্কবাণী
অটোয়া। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নতশীল দেশগুলাের জন্য বর্ধিত পরিমাণে ত্রাণ ও অতিরিক্ত সম্পদের সন্ধান করার জন্য উন্নত দেশগুলাের নিকট জোরালাে ভাষায় দাবি জানান। সােমবার কমনওয়েলথ সম্মেলনে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র দেশসমূহের চাহিদার কথা উপেক্ষা করায় প্রতিকূল পরিস্থিতি সম্পর্কে উন্নত জাতিসমূহের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, দরিদ্র দেশসমূহের প্রয়ােজনের প্রতি অনুন্নত দেশগুলাের উদাসীন মনােভাব বিপদজনক। তিনি বলেন, কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের স্বার্থে দরিদ্র দেশসমূহের প্রতি কমনওয়েলথের উন্নত দেশসমূহের পক্ষ থেকে অর্থবহ অর্থনৈতিক সাহায্যের হস্ত প্রসারণ করা উচিত। কতিপয় দেশ উন্নতশীল দেশসমূহকে অর্থনৈতিক সাহায্য দানের ব্যাপারে যে ‘ধীরে চল’ নীতি গ্রহণ করেছে, তার ফলে অনভিপ্রেত পরিণতি ঘটতে পারে। অধিকতর স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমের ব্যাপারে বিশ্ব জাতি কমিটির সাম্প্রতিক আলােচনায় যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে তিনি দরিদ্র জাতিগুলাের প্রয়ােজনের কথা বিস্মৃত না হবার জন্য বিত্তশালী জাতিগুলাের প্রতি আবেদন জানান। তিনি বলেন, আমরা নৈরাশ্যের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ইউরােপীয় অর্থনৈতিক জোট উন্নয়নমূলক সাহায্য বাবদ বিত্তশালী জাতিসমূহের মতাে জাতীয় আয়ের যে শতকরা ৭ ভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে তা এখনাে কার্যকর। করা হয়নি। তিনি এ আশা প্রকাশ করেন যে, কমনওয়েলথের বিত্তশালী দেশসমূহ যথাশীঘ্র সম্ভব। এই বর্ধমান হারে মূল্য প্রদান করতে হচ্ছে। এর ফলে দরিদ্র দেশগুলাের পক্ষ থেকে দরিদ্র দেশগুলিকে প্রদত্ত উন্নয়নমূলক সাহায্যে আর্থিক মূল্য হ্রাস পাচ্ছে। এরূপ অবস্থা অসঙ্গত। কারণ এর ফলে এটাই প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, দারিদ্র মােকাবেলার সংগ্রামে উন্নতশীল দেশগুলােকে যে ধরনের ও যে প্রকৃতির সাহায্যদান করা উচিত তা বিবেচনা করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা এ কথা স্বীকার করি যে, ধনী দেশগুলাের মধ্যে বৈষম্যের ব্যবধান রাতারাতি দূর করা যেতে পারে না এবং এর জন্য দীর্ঘদিন লাগবে। তবে দরিদ্র দেশগুলাের বার্ষিক অগ্রগতির হার যাতে শতকরা ন্যূনপক্ষে ৬ থেকে ৭ ভাগ সুনিশ্চিত করার জন্যে আন্তর্জাতিক সমাজকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এজন্য বিত্তশালী দেশগুলাের পক্ষে দরিদ্র দেশগুলােতে উল্লেখযােগ্য পরিমাণ সম্পদ পাঠাবার দরকার হবে না। তিনি এ আশা প্রকাশ করেন যে, কমনওয়েলথের সদস্যদের সময়মতাে প্রচেষ্টার ফলে জরুরি আন্তর্জাতিক সমাধানের পথ উল্লেখযােগ্যরূপে প্রশস্ত হবে।২৪
রেফারেন্স: ৮ আগস্ট ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ