কানাডায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর দৃপ্ত ঘােষণা
অটোয়া। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা নস্যাতের ক্ষমতা কারাে নেই। রােববার বঙ্গবন্ধুর সম্মানে কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশনার এক সংবর্ধনা সভার আয়ােজন করেন। সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকার জন্য এসেছে এবং স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরাট পুনর্গঠনমূলক কার্যাবলি ও গত ১৮ মাসে সরকার যে সব উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন- বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় তা উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন যে, পাকিস্তানের এতাে বড় ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাবার পর বাংলাদেশের একটা মানুষ অনাহারে মারা যায়নি। সরকারের জাতি গঠনমূলক কার্যে জনসাধারণকে বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানকারী বাঙালিদের সর্বতােভাবে সাহায্যের নিমিত্তে এগিয়ে আসার জন্যে তিনি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তান শুধু আমাদের অর্থনীতিকেই ধ্বংস করেনি। এক শ্রেণির লােকের নৈতিক অবনতিও ঘটিয়ে গেছে। তিনি বিশেষ গুরুত্বের সাথে বলেন যে, আমি চাই জাতির চারিত্রিক দৃঢ়তা। কেননা যেকোনাে জাতির উন্নতির জন্য এটা হচ্ছে পূর্বশর্ত। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমেদও সভায় বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, তার সরকারের ওপর জনগণের দৃঢ় আস্থা রয়েছে। গত ২৫ বছর ধরে যারা ত্যাগ আর দুর্ভোগ পােহায়েছে, জনগণের সমস্যা সম্পর্কে তারা পূর্ণ সচেতন রয়েছে এবং জনকল্যাণই তাদের কাছে সবার ঊর্ধ্বে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীনতার ১৮ মাসের মধ্যে তিনি দেশে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, শাসনতন্ত্র দিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার সরকারের ব্যাপক সাহায্য অভিযান এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক ধ্বংসকৃত সেতু এবং খাদ্য গুদামগুলাে মেরামতের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, সারা জীবন আমি জনগণের কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছি। কারণ তাদের আমি ভালােবাসি। আমি একটা দিনের জন্যও অবসর গ্রহণ করিনি, নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছি। প্রধানমন্ত্রী চারিত্রিক দৃঢ়তায় বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে বলেন যে, সােনার বাংলা গড়তে সােনার মানুষকে প্রয়ােজন। ভারতের সাথে বাংলাদেশ -এর গভীর মৈত্রীর কথা। উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ও স্বাধীনতার উত্তরকালে দেশ গড়ার কাজে ভারতের সক্রিয় সাহায্য ও সহযােগিতার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।১৯
রেফারেন্স: ৬ আগস্ট ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ