You dont have javascript enabled! Please enable it!

সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে উপমহাদেশের সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলার আহ্বান

দুবরকনিক। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ দিনব্যাপী যুগােশ্লাভিয়া সফর শেষে ঢাকা ও বেলগ্রেড থেকে যুগপভাবে একটি যুক্ত ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। ইশতেহারে উপমহাদেশের দেশসমূহের মধ্যে সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত সমস্যা সমূহের সমাধানের আহ্বান জানান হয়। ইশতেহারে যুগােশ্লাভ প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্ভুত মানবীয় সমস্যাসমূহ সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা এবং উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই পদক্ষেপকে চূড়ান্ত ও গঠনমূলক বলে অভিহিত করেন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইশতেহারে উপমহাদেশের পরিস্থিতি পর্যলােচনা এবং পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের সমস্যার আলােকে পুনঃ অবস্থার অবনতি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ইচ্ছার কথা পুনরুল্লেখ করে বলেন, উপমহাদেশের দেশসমূহের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন ও অমীমাংসিত সমস্যাসমূহ সমাধানে বাংলাদেশ সরকার বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যুক্ত ইশতেহারে উভয় দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত দীর্ঘস্থায়ী আলাপ-আলােচনার বিস্তারিত বিবরণ সন্নিবেশিত করা হয় এবং আন্তর্জাতিক অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে উভয় দেশের সাদৃশ্য ও পূর্ণ সমঝােতায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ইশতেহারে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আলােচনা করে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর ও আলাপ-আলােচনার পদ্ধতিকে অভিনন্দন জানান। এ প্রসঙ্গে যুদ্ধ অবসানের অগ্রগতিতে এবং ভিয়েতনাম ও লাওসে শান্তি পুনরুদ্ধারে অভিনন্দন জ্ঞাপন করে লাওস ও ভিয়েৎনামের জনগণকে স্বাধীন ও সার্বভৌমের ভিত্তিতে নিজেদের ভাগ্য নিজেদের নির্ধারণ করার অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। নেতৃদ্বয় এই মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে, উত্তেজনা প্রশমন ও আলাপ আলােচনার পদ্ধতি বিশ্বের অন্যান্য অংশেও ব্যাপকভাবে কার্যকরি হবে। এই প্রসঙ্গে বৃহৎ শক্তিগুলাের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। নেতৃদ্বয় বিশ্বের কতিপয় অংশে উত্তেজনা প্রশমনের প্রবণতা থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্য, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় উত্তেজনা ও বিরােধ বিদ্যমান থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উভয় প্রধানমন্ত্রী আরব জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ঘােষণা করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। ইশতেহারে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ নীতির ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরােপ করে বলা হয় যে, আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রশমন ও বিশ্বশান্তি সংহত করার ক্ষেত্রে জোটনিরপেক্ষ নীতির বিরাট অবদান রয়েছে। এই প্রসঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিতব্য জোটনিরপেক্ষ দেশগুলাের সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে এর সাফল্য কামনা করা হয়। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্ত ইশতেহারে ঔপনিবেশিক শােষণ থেকে মুক্তিকামী স্বাধীনতা সংগ্রামে রত জনগণের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা ঘােষণা করে ঔপনিবেশিক শােষণ ও জাতিগত বিদ্বেষের তীব্র নিন্দা করেন। উভয় পক্ষ থেকে দুই দেশের মধ্যে সকল স্তরে যােগাযােগ অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়।১২২

রেফারেন্স: ৩১ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!