You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.08.02 | আমরা কারাে রক্তচক্ষুকে পরােয়া করি না- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আমরা কারাে রক্তচক্ষুকে পরােয়া করি না- বঙ্গবন্ধু

অটোয়া। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। তাদের এই বিচার প্রতিশােধ স্পৃহা থেকে অনুষ্ঠিত হবে না। ন্যায়ের খাতিরে এবং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্যেই এইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। এদের বিচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে হবে বাংলাদেশে এরা কত অমানুষিক বর্বরতা চালিয়েছে। কানাডার বিশিষ্ট দৈনিক পত্রিকা লাের্ভের সাথে এক দীর্ঘস্থায়ী সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপরােক্ত মন্তব্য করেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত মানবীয় সমস্যাসমূহের সমাধানের ব্যাপারে তার প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা এইসব মানবীয় সমস্যা সমাধানে আগ্রহী এবং উপমহাদেশের দেশ সমূহের মধ্যে অমীমাংসিত বিরােধগুলাে সমাধানে উদগ্রীব। তবে বাংলাদেশ কারও রক্তচক্ষুর সামনে আত্মসমর্পণ করতে রাজী নয়। তাই এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ঘােষণার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি জনগণ কিংবা প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর বিরুদ্ধে তার কোনাে বিদ্বেষ নেই। তিনি তাদের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা উপমহাদেশের শান্তি পুনরুদ্ধার হােক। আমরা সকলে শান্তিতে বসবাস করি। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সাথে বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে আলােচনায় বসতে পারে। তবে তা সার্বভৌম। সমতার ভিত্তিতে হতে হবে। পাঠান ও বেলুচদের মধ্যে অশান্ত অবস্থার উদ্ভব হওয়ায় জনাব ভুট্টো আভ্যন্তরীণ সমস্যার মােকাবেলা করছেন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, কেউ নিজে অনুরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে কেউই তাকে সাহায্য করতে পারে না। চীন সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখিত যে, চীন আমাদের স্বীকৃতির পথে অন্তরায় হয়ে রয়েছে। ১ শত ৩টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষকে কেউই দাবিয়ে রাখতে পারবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা বিশ্বশান্তির পক্ষে এবং যে কোনাে অস্ত্র প্রতিযােগিতা ও পারমাণবিক পরীক্ষার বিরােধী। এই প্রসঙ্গে তিনি বৃহৎ শক্তিবর্গকে অস্ত্রের প্রতিযােগিতা বন্ধের আহ্বান জানান। কমনওয়েলথ সম্মেলন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, কমনওয়েলথ জাতিসমূহ যৌথ ও ব্যাপক ভিত্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের দুর্দশা লাঘবে। সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ বাংলাদেশকে খাদ্য কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমর্থন ও সাহায্যের মাধ্যমে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মতাে অবস্থায় রয়েছে। তিনি পাকিস্তানি শাসক গােষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার আটক বাঙালিদের উদ্ধারের জন্য বিশ্ব বিবেককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।৪

রেফারেন্স: ২ আগস্ট ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ