You dont have javascript enabled! Please enable it!

যুগােশ্লাভ প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভােজসভায় বঙ্গবন্ধু

বেলগ্রেড। যুগােশ্লাভিয়া সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে যুগােশ্লাভ প্রধানমন্ত্রী মি. জামাল বিয়েদিচ ও মাদাম বিয়েদিচ আয়ােজিত রাষ্ট্রীয় ভােজসভায় ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিশ্বশান্তি আমাদের অন্যতম মূলনীতি। তাই উত্তেজনা হ্রাস আন্দোলনের ফলশ্রুতি ভিয়েতনাম ও লাওস সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তি এবং সােভিয়েত-মার্কিন নেতৃবৃন্দের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই। বঙ্গবন্ধু বলেন, এই কথা স্বীকার করতে হবে যে, বিশ্বে এমন একাধিক স্থান রয়েছে যেখানে শান্তি আজও হুমকির সম্মুখীন। আগ্রাসী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সেখানকার স্বাভাবিক গতিধারাকে স্তব্ধ করে চলেছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার পদদলিত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি। তাই প্যালেস্টাইনের অধিবাসীদের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। অধিকৃত আরব এলাকা পুনরুদ্ধারের দাবিতে আমরাও সােচ্চার। বঙ্গবন্ধু বলেন, কম্বােডিয়ায় অব্যাহত বােমাবর্ষণ ও আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি ক্ষতিকর প্রবণতারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, অ্যাংগােলা, মােজাম্বিক, নামিবিয়ার মুক্তি সংগ্রাম এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণভেদবাদী শাসনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রতি তথা বিশ্বের সকল স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা মনে করি যে, বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকি স্বরূপ বৃহৎশক্তিবর্গের মধ্যকার অস্ত্র প্রতিযােগিতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার এবং অস্ত্র প্রতিযােগিতায় ব্যয়িত অর্থ দুনিয়ার দুঃখী মানুষের কলাণে ব্যয়িত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুগােশ্লাভিয়ার সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরকার সমস্যা, শান্তি সংরক্ষণ, জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির ব্যাপারে প্রায় একই ধরনের অভিমত পােষণ করে এবং সাধারণ কর্মপন্থায় উভয় দেশ বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে যুগােশ্লাভিয়া ইতােমধ্যে যে। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাতে আমরা শুধু বৈষয়িক দিক থেকেই উপকৃত হইনি। সমাজতান্ত্রিক সংস্থা গঠনের বিপুল সাফল্য অর্জন করে যুগােশ্লাভিয়া যে অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে তাও আমাদের কাজে লাগছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট টিটো বাংলাদেশের জনগণের কাছে গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র। তাই উপমহাদেশে শান্তি স্থাপনে আমাদের প্রচেষ্টার প্রতি যুগােশ্লাভিয়ার সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আমি স্থির নিশ্চিত।
আলােচনা বৈঠক : বাংলাদেশ ও যুগােশ্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রীদ্বয় এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের মধ্যে পৃথক পৃথকভাবে আজ আবার আলােচনা শুরু হয়েছে। গতকালও স্বল্প সময়ের জন্য প্রাথমিক আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর বসনিয়া সফর : প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ সকালে যুগােশ্লাভ প্রধানমন্ত্রী মি. বিজেডিক-এর সঙ্গে ট্রেনে করে বসনিয়া যাত্রা করেছেন। সেখানে তিনি নাৎসিদের বিরুদ্ধে বসনিয়ায় গণ-অভ্যুত্থানের ৩২তম দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। সারা যুগােশ্লাভিয়ায় বসনিয়ার গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালিত হচ্ছে।
ট্রেনে আলােচনা : উভয় প্রধানমন্ত্রী চলন্ত ট্রেনে রুদ্ধদ্বার কক্ষে কোনাে সহায়তাকারী ছাড়াই নিজেদের মধ্যে আলােচনা শুরু করেন। তারা উভয়ই ব্যাপক আকারে বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে খােলাখুলিভাবে মতামত বিনিময় করেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট টিটোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের উভয় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলােচিত হয়। বসনিয়া অনুষ্ঠান শেষে বিকালে বেলগ্রেড ফেরার পর উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা আলােচনা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় দফা আলােচনায় উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ও যােগদান করবেন।
আজ টিটোর সাথে দেখা করবেন : প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শনিবার সকালে প্রেসিডেন্ট টিটোর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কিত সমস্যাদি নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রেসিডেন্ট টিটোর সাথে আলােচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
ড. কামাল ও ড. নুরুল ইসলামও আলােচনা করেছেন : ইতােমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন। এবং পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন দুটি দলের মধ্যে পৃথক পৃথক ভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে যুগােশ্লাভিয়ার কর্তৃপক্ষের আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়।১০৬

রেফারেন্স: ২৭ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!