You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাজের মধ্য দিয়েই সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে- তাজউদ্দীন আহমদ

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবিরাম কাজ করে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিরলস কাজের মাধ্যমেই দেশকে সমৃদ্ধ করে তােলা সম্ভব। তিনি কর্মপ্রবাহ সৃষ্টি ও সঞ্চয়ের ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। জাতীয় সঞ্চয় সপ্তাহের উদ্বোধন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ রবিবার এক অনুষ্ঠানে ভাষণদান প্রসঙ্গে বলেন যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য নিজস্ব প্রচেষ্টা ও সঞ্চয়ের ওপর অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হবে। জাতীয় সঞ্চয় আন্দোলনকে সফল করার জন্য তিনি গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা গড়ে তােলার প্রয়ােজনীয়তা বিশ্লেষণ করেন। কৃষকদের সামান্য সঞ্চয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যকরি করতে বিরাট সহায়ক হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সারা বছরে ১০ টাকা জমা দিলে ১০ বছর পর ওই টাকা বেড়ে একশত টাকায় দাঁড়াবে। তাই সেভিং সার্টিফিকেট কিনে সঞ্চয় করা যে জাতি ও ব্যক্তির জন্য প্রভূত কল্যাণ আনয়ন করতে পারে, তা জনসাধারণকে বুঝিয়ে দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামে কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদন বাড়াচ্ছে। অথচ তারা কোনােদিন কাজ ছেড়ে ধর্মঘট করার কথা বলে না। তারা কাজ ছেড়ে দেয়ার কথা চিন্তাও করে না। তারা শুধু চায় তাদের সার দেয়া হােক, পাম্পিং সেট সরবরাহ করা হােক, ডিজেল তেল ও কীটনাশক ঔষধের ব্যবস্থা করা হােক। এরা ফসল উৎপাদন করে দেশের সমৃদ্ধি আনয়নের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এছাড়া যৎসামান্য করে সঞ্চয় করলে তা নতুন নতুন কর্মসংস্থানে বিরাট সহায়ক হবে। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ আরও বলেন যে, উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণভাবে সাহায্যের ওপর নির্ভর করা চলে না। পরিকল্পনায় অন্তত শতকরা ৫৫ ভাগ অর্থ নিজেদের যােগাড় করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের চলতি আর্থিক সালে উন্নয়ন বরাদ্দের শতকরা ৩৫ ভাগ অর্থের বেশি যােগাড় করতে পারবে না। এ ৩৪ ভাগ অর্থ যােগাড় করতেও তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। আভ্যন্তরীণ সম্পদের এই অভাবের জন্য সরকার পাঁচসালা পরিকল্পনার প্রথম বছরে ৫২৫ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন নি। অথচ প্রথম বছরে ৮’শ কোটি টাকার কম ব্যয় করার কথা নয় বলে তিনি জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্পদ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের অবশ্যই কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে। পূর্বে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ দুটি হিসাবের খাতা রেখে চুরি চামারি করেও বার্ষিক রিপাের্টে লাভ দেখাতাে। আজ জাতীয়করণ করার পর বিভিন্ন কলকারখানা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করতে হয়। এই সব শিল্প ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি সনে অন্তত ৬৫ কোটি টাকা পেতে হবে বলে তিনি জোর দেন। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ তার বক্তৃতায় দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেন। প্রত্যেককে আজ অফিসে আদালতে ফ্যাক্টরিতে ও হাটে-মাঠে নির্বিঘ্নে কাজ করতে হবে। জাতিকে কাজের মধ্য দিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে, দেশকে সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। কাজের মাধ্যমেই সম্পদ গড়তে হবে। জাতির ও জনগণের উন্নয়নের জন্য তাই আজ আমাদিগকে শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জনাব মতিউল ইসলাম এবং জাতীয় সঞ্চয় পরিচালক জনাব কাজী আওলাদ হােসেনও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ১৯৭৩ থেকে ৭৪ সালের জন্য সঞ্চয়ের জন্য মাত্র ৫১ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি সকলের সহযােগিতা কামনা করেন।৮৪

রেফারেন্স: ২২ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!