শান্তি ও প্রগতির স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে
বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী দেশ। তাই শান্তি ও প্রগতির স্বার্থে সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগার মিলনায়তনে আয়ােজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রেসিডিয়ামের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি উপরােক্ত মন্তব্য করেন। পূর্ব জার্মানীর বার্লিনে আয়ােজিত দশম বিশ্ব ছাত্র যুব উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় প্রস্তুতি কমিটি এই সেমিনারের আয়ােজন করেন। যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত পূর্ব জার্মান দূতাবাসের কাউন্সিলর মি. ব্রনাে মে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা জনাব সাইফুদ্দিন মানিক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব নুরুল ইসলাম। সভাপতির ভাষণে শেখ ফজলুল হক মণি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের কোন রাষ্ট্রকেই সাম্রাজ্যবাদ আর পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানাে সম্ভব নয়। তাই সমগ্র বিশ্ব মানবতার খাতিরে বিশ্বের শান্তিবাদী আর সমাজতান্ত্রিক জাতিসমূহের ঐক্যবদ্ধ হওয়া আবশ্যক বলে শেখ মণি মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ চিনে। বাংলাদেশে গণহত্যা চালাতে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ পাকিস্তানকে মদদ যুগিয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনাব ফজলুল হক মণি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাদের সাথী এবং মিত্র খুঁজে নিতে হবে। বার্লিন যুব উৎসবে বাংলাদেশ যুব প্রতিনিধি দল তাদের মিত্রের সন্ধানেই যাচ্ছে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত তিনি বলেন যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ রােধকল্পে এবং বিশ্বের মানব সমাজের শান্তি ও প্রগতির স্বার্থে বার্লিন যুব সমাজের ভূমিকা অসাধারণ। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বের যে কোনাে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। তিনি বলেন, বার্লিন উৎসবে গিয়ে সমগ্র বিশ্বের সকলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা বিশ্বের মেহনতি মানুষের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের জয়গান গাইবাে। যুবলীগ নেতা প্রসঙ্গত যুব উৎসব আয়ােজনের জন্য পূর্ব জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিশ্বের প্রগতিশীল যুব সমাজের ঐক্য গঠনে বার্লিন উৎসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মি. ব্রনাে মে : অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের দূতাবাসের কাউন্সিলর মি. ব্রনাে মে বার্লিন যুব উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিকে স্বাগত জানান। মি. ব্রনাে মে তার ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এদেশের যুব সমাজের গৌরবােজ্জ্বল ভূমিকা এবং দেশ গড়ার কাজে যুব সমাজের আন্তরিকতার প্রশংসা করেন। প্রসঙ্গত মি. ব্রনাে মে বলেন, বিশ্বকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমগ্র মানব সমাজের ঐক্য প্রতিষ্ঠাই বার্লিন যুব উৎসবের লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির সংগ্রামী ঐতিহ্য এবং জনপ্রিয় নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বার্লিন যুব উৎসবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব সাইফুদ্দিন মানিক এবং জনাব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বার্লিন যুব উৎসবের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তারা বলেন, বিশ্বের মুক্তিকামী যুব সমাজের এই সমাবেশ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করবেন।৬৭
রেফারেন্স: ১৭ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ