You dont have javascript enabled! Please enable it!

শ্রমিকদের আত্মবিশ্বাস ও নিষ্ঠা উৎপাদন বাড়াবে- সৈয়দ নজরুল ইসলাম

শিল্পমন্ত্রী জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন যে, সরকার নিয়ন্ত্রিত কলকারখানা সমূহ লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যদি সরকার নিয়ন্ত্রিত কলকারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীবৃন্দ দৃঢ় প্রত্যয় ও নিষ্ঠার সঙ্গে উৎপাদন বাড়ানাের কাজে নিয়ােজিত হন।
শুক্রবার বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান প্রদত্ত স্থানীয় একটি হােটেলে ভােজসভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন যে, গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ৫৬ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। তিনি সংস্থার এই সাফল্যকে অন্যান্য সরকার নিয়ন্ত্রিত কলকারখানার কাজে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে অভিমত প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যৎ বন। শিল্প উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃপক্ষকে যে কোনাে প্রতিবন্ধকতায় তার পূর্ণ সহযােগিতার আশ্বাস দেন। তিনি গভীর বনাঞ্চল ও কলকারখানায় কার্যরত সংস্থার সকল কর্মচারী ও শ্রমিকদের তাদের এই সাফল্যের জন্য মােবারকবাদ জানান। পূর্বাহ্নে সংস্থার চেয়ারম্যান জনাব এম, এ, রশিদ সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি বলেন যে, বিগত ৬ মাসে সংস্থার কোনাে প্রকল্পে ধর্মঘট, ঘেরাও ইত্যাদি ঘটনা ঘটেনি এবং শ্রমিকগণ অক্লান্তভাবে উৎপাদন কাজ চালিয়ে গিয়েছে, সংস্থার প্রধান চলতি অর্থবছরে সংস্থা ন্যূনপক্ষে ৩ কোটি টাকা মুনাফা করবে বলে তিনি আশা পােষণ করেন। এই ভােজ সভায় শিল্পমন্ত্রী ছাড়াও বন, মৎস্য ও পশু পালন মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবত উপস্থিত ছিলেন।
কর্পোরেশনের কার্যসূচি : গত অর্থ বৎসরে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (বিএফআইডিসি) ৫৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা মুনাফা অর্জনে এই প্রথম। সংস্থার সৃষ্টির পর ১৯৫৯ থেকে ১৯৭১-৭২ সাল পর্যন্ত এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা লােকসান দেয়। সংস্থা চলতি আর্থিক বৎসরে ন্যূনপক্ষে ৩ কোটি টাকা মুনাফা করবে বলে আশা করেন। এইখানে উল্লেখযােগ্য যে, বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা ১৯৫৯ সালে সৃষ্টি হওয়ার পর সংস্থা বেশ সাফল্যের সাথে চট্টগ্রাম, খুলনা এবং ঢাকার ২টি কাঠ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা (উডট্রিটিং) কয়েকটি সক্রিয় আসবাবপত্র কলকারখানা এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক রবার চাষের কাজে হাত দেন। এছাড়াও সেই সময় সংস্থার একটি বৃহৎ যন্ত্র ও কাগজ কারখানা, পার্টিকেল বাের্ড এবং কাপ্তাইয়ে একটি বিশাল সক্রিয় করাত কল স্থাপনের প্রাথমিক কাজ হাতে নেয়। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসের দীর্ঘ চার বছর পর স্থায়ী চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীকালের পরিচালক মন্ডলী নিযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সংস্থার কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রিতভাবে সাবলিলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। চালু প্রকল্পগুলাের পূর্ণ উৎপাদন নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে সংস্থার প্রকল্পগুলাের প্রয়ােজনীয় অর্থ মঞ্জুরি নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে চালু প্রকল্পগুলােতে ১০০ ভাগ উৎপাদন চালু রয়েছে। প্রতিটি কারখানার জন্য খুচরা যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কাঠ চিরানাে এবং কাঠ আহরণের পরিমাণ যথাক্রমে ২ গুণ এবং ৩ গুণের বেশি বাড়ানাের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে সংস্থা প্রায় ৩৫ হাজার টন কাঠ আহরণ করেছে। ইতােপূর্বে এই কাঠ আহরণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২৭ হাজার টনের বেশি হয়নি। চলতি আর্থিক বছরে সংস্থা কাঠ আহরণের পরিমাণ উন্নীত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিদেশ থেকে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক ট্রাক্টর, ক্রেন ও হারভেস্টিং ট্রাক আনার ব্যবস্থা হয়েছে। এই ছাড়া প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে বাৎসরিক ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ঘনফুট কাঠ চিরাতে সক্ষম। কাপ্তাইয়ে স্বয়ংক্রিয় করাত কলটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন আরম্ভ করেছে এবং নির্মাণাধীন প্রকল্প নাম্বার প্রসেসিং এবং বাৎসরিক ২ লাখ ঘনফুট উৎপাদনক্ষম। ডেকোরেটিভ প্লাইন ভিনিয়ার কারখানাটি চলতি বৎসরই উৎপাদনক্ষম হবে। এছাড়া বর্তমানে সিলেটে নির্মাণাধীন কাগজ ও মন্ড কারখানাটি নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি সরবরাহ আরম্ভ হয়েছে। সংস্থার রাবার বাগান থেকে গত অর্থবছরে ৩ লক্ষ পাউন্ডেরও অধিক কাঁচা রাবার সংগ্রহ হয়েছে। এই পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে রাবার চাষ করা হয়েছে। চলতি বৎসরে ২ হাজার একর জমিতে রাবার চাষ করা হবে। সংস্থার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানা গেছে।৮৩

রেফারেন্স: ২০ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!