বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ভুট্টোকে ক্ষমতা দিয়েছে
ইসলামাবাদ। সােমবার অধিক রাত্রিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে বলে বিবেচিত হলে যে কোনাে সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট ভুট্টোকে দেওয়া হয়েছে। মধ্যরাত্রের পর সুদীর্ঘ আলােচনার উপসংহারে তিনি ৭০ মিনিট আবেগপূর্ণ ভাষায় ভাষণ দান করেন। এই বক্তৃতায় তিনি বিরােধী দলগুলাের ভূমিকার কঠোর সমালােচনা করেন। কোনাে কোনাে বিরােধীদল অতীতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের দাবি সমর্থন করা সত্ত্বেও পরিষদে বিতর্ককালে তারা ওয়াক আউট করে। তিনি এসব দলকে ভারতের দালাল বলে অভিহিত করেন। বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করুক ভারত এখন আর তা চায় না। কারণ দুটি মুসলিম জাতির মধ্যে শক্তিশালী যােগসূত্র গড়ে ওঠে, নয়াদিল্লি কর্তৃপক্ষ এটাই ভয় করছে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান করি এটা ভারতীয়রা চায় না। তারা ভয় করছে যে, এর ফলে দুটি মুসলিম দেশ পরস্পরের নিকটবর্তী হতে পারে। আমরা বিষয়টি মুসলিম বাংলার ওপর ছেড়ে দিতে চাই। তারা যদি আমাদের সাথে কিছুটা যােগসূত্র বজায় রাখতে চায় সে ভালাে কথা এবং যদি না চায় তাতেও কোনাে আপত্তি নেই। তবে জনাব ভুট্টো পুনরায় বলেন যে, পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করা উচিত। এর ফলে এই নয়া জাতির উপর ভারতীয় আধিপত্য কায়েম হতে পারবে না। যদি আমরা বােকা হই তবেই আমরা মুসলিম বাংলাকে হিন্দু বাংলায় পরিণত হতে দেব। সুতরাং এই কারণেই আমি মুসলিম বাংলাকে স্বীকৃতি দান করতে চাই। আমরা পরস্পর মিলিত হতে চাই, একে অন্যকে আলিঙ্গন করতে চাই। অতীতে আমাদের মধ্যে যা ঘটে গেছে সে জন্য আমরা অশ্রু বিসর্জন করতে চাই। তবে তিনি বলেন যে, ৯০ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি স্বদেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং বাংলাদেশ ১৯৫ জন যুদ্ধপরাধীর বিচারের পরিকল্পনা তার উপর ন্যস্ত ক্ষমতা কার্যকরি করবেন না। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করতে প্রস্তুত আছে।৩৮
রেফারেন্স: ১০ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ