সংসদে বাজেটের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাজউদ্দিনের ভাষণ
বর্তমান বাজেট দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৌঁছানাের পথ রচিত করবে। এই বাজেট সমাজতান্ত্রিক বাজেট বলে দাবি করা হয়নি। এমনকি, সমাজতন্ত্রের পথে এটা একধাপ পদক্ষেপও নয়। গতকাল জাতীয় পরিষদে বাজেটের উপর সমাপনী ভাষণ দানকালে অর্থমন্ত্রী উপরােক্ত মন্তব্য করেন। এই বাজেট সমাজতান্ত্রিক নয় বলে কতিপয় সদস্য যে সমালােচনা করেন তিনি তার জবাব দিচ্ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বছর সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৌঁছানাের পথ সুগম করে তােলা সম্ভব হবে। দেশের এই অগ্রগতির ভিত্তি স্থাপনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিয়ােগের জন্য তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠন ও আগামী চার বছরের অগ্রগতি প্রধানত নির্ভর করছে সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপর। জাতির সামনে আজ এক মহান কাজ রয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, দেশে বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগ তার অর্থনৈতিক কর্মসূচি বর্জন করেনি। দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পূর্বেই সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়েছিল। তিনি বলেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সরকার দেশের ভারি শিল্পগুলাে জাতীয়করণ করেছে। কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে সরকারের এই জাতীয়করণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার একটি কঠিন কাজ হাতে নিয়েছেন। গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা আমাদের দেশে শাসনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে রয়েছে। আমরা এভাবেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্প বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকাংশই শিক্ষিত না হলেও তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন। সরকারের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মূল শক্তি এরাই। শাসনতন্ত্র বিধিবদ্ধ নাগরিক স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার প্রয়ােগের ব্যাপারে জনগণকে শিক্ষিত করে তােলার জন্য তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। জাতীয় সংসদের সদস্যগণ বাজেটের বিভিন্ন দিক আলােচনা করেন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র দেড় বছর হলাে দেশ তার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে। স্বাধীনতার আগে শত্রু বাহিনীর একটি উপনিবেশ হিসাবে এদেশ গড়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, বৃটিশের সাথে পাকিস্তানি শাসকদের তুলনা করা যায় না। এ দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় বৃটিশ পাকিস্তান এদেশ সামগ্রিকভাবে শােষণ করে সব সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে গেছে।১৯
রেফারেন্স: ৫ জুলাই ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ