You dont have javascript enabled! Please enable it!

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুসলিম লীগ ব্যবস্থাপক সভার সদস্যদের সভায় এক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব।
প্রস্তাবকঃ শহীদ সোহরাওয়াদী
ইন রেট্রসপেকশান; আবুল হাসিম

পৃষ্ঠা ১৭৯

৯ই এপ্রিল, ১৯৪৬

দিল্লী প্রস্তাবনা ১৯৪৬*

 (প্রস্তাবনার ভাষ্য এপ্রিল ৯, ১৯৪৬ সালে অ্যাংলো-এরাবিক কলেজ, দিল্লীতে অনুষ্ঠিত আইন প্রণেতাদের সভার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির ভাষণ থেকে সংগৃহীত।)

এই বিশাল ভারতীয় উপমহাদেশে যেখানে ১০ কোটি মুসলিম এমন একটি ধর্মের অনুসারী যা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র, শিক্ষা, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতি; নিয়ন্ত্রন করে, যা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক মতবাদ, বিশ্বাস অথবা আচার-অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয় এবং যা হিন্দু ধর্ম ও দর্শনের বিরোধী যা কিনা হাজার বছর ধরে কঠোর বর্ণপ্রথা লালন করেছে যার ফলে ৬ কোটি লোক অস্পৃশ্য জীবে পরিণত হয়েছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ আর দেশের কোটি কোটি লোকের ওপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য চাপিয়ে দেয়া হলে মুসলিম, খ্রীস্টান আর অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মের অনুসারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দলিত শ্রেণিতে পরিণত হবে।

জাতীয়তাবাদ, সাম্য, গণতন্ত্র এবং অন্যান্য যত মহান আদর্শকে ইসলাম সমর্থন করে, হিন্দু বর্ণপ্রথা তা অস্বীকার করে।

হিন্দু ও মুসলিমদের ঐতিহাসিক পটভূমি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিয়মাবলী অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ অবিভক্ত ভারতীয় জাতির আত্মপ্রকাশকে অসম্ভব করে তুলেছে এবং শতাব্দী পার হবার পরও তারা দুটি ভিন্ন পৃথক বৃহত্তর জাতি হয়েই থাকবে।

ব্রিটিশদের মাধ্যমে পশ্চিমা গণতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠার নীতির প্রবর্তনের পরপরই, আমরা দেখেছি যে এই নীতির ফলে কোন জাতি বা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী অন্য জাতি বা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর বিরোধীতা সত্ত্বেও তাদের ওপর  সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে, যার উদাহরণ আমরা দেখেছি কংগ্রেস সরকারের আড়াই বছরের শাসনামলে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোতে যখন ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ এর অধীনে মুসলিমরা অবর্ণনীয় শোষণ ও হয়রানির শিকার হয়েছিলো। যার ফলে তারা সংবিধানের দেয়া তথাকথিত নিরাপত্তার আশ্বাসের অসারতা ও অক্ষমতা ও গভর্নরদের বিধি-নিষেধের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ফেডারেশন যদি প্রতিষ্ঠা পায়, তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলোতেও তাদের অবস্থার কোন উন্নতি হবে না এবং তাদের অধিকার ও স্বার্থ কেন্দ্রের চিরস্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নিকট কখনোই গ্রাহ্য হবে না।

*লাহোর প্রস্তাব “States of Pakistan’ বা একাধিক পাকিস্তানের কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ‘States’ শব্দ পরিবর্তন করে “State’ বা একটি পাকিস্তান করা হয়।

আর তাই মুসলিমরা এখন নিশ্চিত যে হিন্দুদের কর্তৃত্ব থেকে মুসলিম ভারতকে বাচাতে এবং তাদের নিজস্ব মেধায় নিজেদের উন্নতি ঘটাতে হলে উত্তর-পূর্বের বাংলা ও আসাম এবং উত্তর-পশ্চিমের পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান নিয়ে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা আবশ্যক।

মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নীতি-নির্ধারকদের এই সভায়, চুলচেরা বিবেচনার পর ঘোষণা করে যে মুসলিম জাতি অবিভক্ত ভারতের শাসনতন্ত্রের কাছে মাথানত করবে না এবং একক সংবিধানের কোন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে না। এতে করে ব্রিটিশ সরকারের ব্রিটিশদের থেকে ভারতের জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়া, যা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রাখার জন্য নিম্নলিখিত যথাযত ও ন্যায়সঙ্গত নীতির সাথে একমত নয়, ভারতের সমস্যার সমাধানে কোন ভূমিকাই রাখবে না।

১. উত্তর-পূর্বের বাংলা ও আসাম এবং উত্তর-পশ্চিমের পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান অর্থাৎ পাকিস্তান জোন, যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, নিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হবে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বাস্তবায়নে দ্যর্থহীন উদ্যোগ নিতে হবে।

২. পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের পৃথক সংবিধান রচনার জন্য দুটি দেশের নাগরিকদের নিয়ে দুটি ভিন্ন সংবিধান রচনা কমিটি গঠন করতে হবে।

৩. ২৩ মার্চ, ১৯৪০ সালে লাহোরে ঘোষিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রস্তাবনা অনুযায়ী পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. মুসলিম লীগের পাকিস্তান গঠনের দাবির অনুমোদন ও অনতিবিলম্বে এর বাস্তবায়ন কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে মুসলিম লীগের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের জন্য অবশ্য করনীয়।

এই সভায় আরো জোরালোভাবে ঘোষিত হয় যে, মুসলিম লীগের দাবির বিপরীতে অবিভক্ত ভারত প্রতিষ্ঠার যে কোন উদ্যোগ নেয়া বা কেন্দ্রে কোন রকম অস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হলে, মুসলিমদের যেকোনো উপায়ে টিকে থাকা ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকবে না।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!