You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.06.24 | আটক বাঙালিদের ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করুন- জাতিসংঘের প্রতি রাষ্ট্রপতি | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

আটক বাঙালিদের ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করুন- জাতিসংঘের প্রতি রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রতি এক আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, জাতিসংঘ এমন ববস্থা গ্রহণ করবে যাতে পাকিস্তান সরকার সেখানে আটক বাঙালিদের তাদের মাতৃভূমির স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে নিরাপদে ফিরে আসতে দেয়। রােববার হােটেল পূর্বাণীতে লায়নস ইন্টারন্যাশনালের ‘নবম জেলা কনভেনশন উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, যতদিন আটক বাঙালিদের নিজেদের মধ্যে বাঙালিরা ফিরে না পাবে ততদিন তারা দেশে ও বিদেশে তাদের ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের লায়ন্সদের মাধ্যমে বিশ্বের ১৫১টি রাষ্ট্রের লায়ন্সদের এ ব্যাপারে জনমত সৃষ্টির আহ্বান জানান। জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন যে, উপমহাদেশের শান্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘােষণা মানবতা, সত্য ও ন্যায়ের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে। তিনি বলেন যে, এই যুক্ত ঘােষণায় পাকিস্তানের সাড়া দেয়া উচিত। রাষ্ট্রপতি আরাে বলেন যে, পাকিস্তানে আটক বাঙালিরা কোনাে দোষ করেনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ অনুসারে যেকোনাে লােক বিশ্বের যেকোনাে স্থান থেকে স্বদেশে ফেরার অধিকার রাখেন। তিনি বলেন, বাঙালিদের দেশে ফিরে আসতে না দিয়ে পাকিস্তান জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ অমান্য করেছে। তিনি বলেন, এই সনদের অবমাননা কোনাে সদস্য রাষ্ট্র করেছে তা দেখার দায়িত্ব জাতিসংঘের। রাষ্ট্রপতি আরাে বলেন যে, পাকিস্তান জাতিসংঘের সদস্যপদ দাবি করতে পারে না। তিনি বলেন, এক সময় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র যে পাকিস্তান ছিল, তা আজ আর নেই। সাবেক পশ্চিম পাকিস্তান ও বর্তমান পাকিস্তানকে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য অন্যান্য দেশের মতাে নতুন করে চেষ্টা করতে হবে। তিনি আরাে বলেন, বর্তমানে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যাও বেশি। জাতিসংঘে পাকিস্তানের সদস্য পদ আছে কিনা, তা যাচাই করারও তিনি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন যে, লায়ন্সদের আদর্শ হলাে মানবতা ও দেশপ্রেমের আদর্শ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানাের জন্য তাদের আহ্বান জানান। তিনি আরাে বলেন যে, দেশের কল্যাণের জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে যে কল্যাণ প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে লায়ন্সরা তাতে সহযােগিতা করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি দেশের লায়ন্স ক্লাবসমূহের বিভিন্ন কল্যাণ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে লায়ন্স প্রতিনিধিদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ক্লাবের মহিলা প্রতিনিধিরা তাদের ক্লাব ব্যানার প্রদর্শন করেন এবং লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ জেলা গভর্নর সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এ আর সিদ্দিকী প্রধান অতিথিকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তৃতা করেন। জনাব সিদ্দিকী তার বক্তৃতায় লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের আদর্শের উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে এই ক্লাবের উদ্যোগে যে স্কুল, হাসপাতাল, চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য মানবিক কার্যক্রম নেয়া হয়েছে তিনি তার বিবরণ দেন।৯৭

রেফারেন্স: ২৪ জুন ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ