রেলওয়ে বাজেটে ২ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত
যােগাযােগ মন্ত্রী জনাব মনসুর আলী সােমবার সংসদে ১৯৭৩-৭৪ সালের রেলওয়ে বাজেট পেশ করেছেন। এই বাজেটে রাজস্ব খাতে ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত দেখানাে হয়েছে। মন্ত্রী বাজেট পেশকালে বলেছেন যে, ১৯৭৩-৭৪ সালের রেল বিভাগের উন্নয়নের জন্য ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে এবং এর জন্য ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। তিনি বলেন, ১ জুলাই থেকে যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আয় হবে। বাজেট রাজস্বখাতে আয় বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৩ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা এবং ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ৩১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। ১৯৭২-৭৩ সালের রাজস্ব খাতে আয় দেখানাে হয়েছিল ২৩ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা এবং ব্যয় দেখানাে হয়েছিল ২৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া ১৯৭৩-৭৪ সালের উন্নয়নখাতে বরাদ্দ করা। হয়েছে ১৪ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। ১৯৭২-৭৩ সালে ওই খাতে ব্যয় করা হয়েছে ২৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা। তবে নতুন প্রকল্পের ব্যয় সমেত ১৯৭৩-৭৪ সালের ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ১৭ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। যােগাযােগ মন্ত্রী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর পােড়ামাটি নীতির ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ের যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তার খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে ৩০০ বিধ্বস্ত সেতু। ৭১ মাইল অপসারিত বা বিধ্বস্ত রেল পথ, অসংখ্য রেলওয়ে স্লিপার ও ফিটিং বিনষ্ট। এছাড়া অফিস, কারখানা গুদাম, শেডসহ প্রায় ১০ হাজার তিন শতটি ভবন, ৪৫টি ডিজেল ও ৯৫টি বাষ্পীয় ইঞ্জিন এবং বহু সংখ্যক যাত্রী ও মালবাহী গাড়ী সামগ্রিক বা আংশিক ক্ষত্রিস্ত হয়েছে। এ ছাড়া সিগন্যাল টেলি যােগাযােগ ও ফেরী যােগাযােগ ও ফেরী ব্যবস্থা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মন্ত্রী এও বলেন যে, অপসারিত ও বিধ্বস্ত রেলপথ পুনঃস্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং তার সংকেত ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও পুননির্মাণের কাজ আংশিকভাবে শেষ হয়েছে। এছাড়া ভৈরব সেতু ছাড়া বাকি ২৯৯টি সেতু স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে কার্যোপযােগী করা। হয়েছে। তিনি বলেন যে, আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ ভৈরব সেতুর পুনর্নির্মাণ শেষ হবে। মন্ত্রী বলেন যে, আগামী অর্থবছরের মধ্যে রেলওয়ের সবক্ষেত্রে পুনঃস্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। রেলওয়ে মন্ত্রী ১৯৭৩-৭৪ সালে রাজস্ব খাতে আয় ১৯৭২-৭৩ সালের সংশােধিত আয়ের বরাদ্দ থেকে ১০ কোটি ২৭ লক্ষ টাকার অধিক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭২-৭৩ সালে যাত্রীবহন ভাড়া বরাদ্দকৃত আয়ের থেকে ৪ কোটি ১১ লক্ষ টাকা বেশি হয়েছিল। আয়ের বরাদ্দ ছিল ১০ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। তবে আয়ের পরিমাণ হবে ১৪ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। তিনি বলেন যে, মাল পরিবহন ক্ষেত্রে বরাদ্দের চেয়ে ৪ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা আয় কম হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, মালবাহী গাড়ী, ইঞ্জিন, খুচরা যন্ত্রপাতি, জ্বালানি, দক্ষ কর্মচারীর অভাব এবং বিনা ভাড়ায় ত্রাণ সামগ্রী বহন করার ফলে এই ঘাটতি হয়েছে। রেলমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন যে, কিছু সংখ্যক সমাজবিরােধী লােক বিনা টিকিটে ভ্রমণ, বিনাভাড়ায় মাল বহন এবং রেলওয়ের সম্পত্তি জবর দখল ও ধ্বংস করে এবং কর্মরত রেল কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে রেলওয়ে তথা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কাজ করেছে। তিনি এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তােলার আহ্বান জানান। মন্ত্রী রেলওয়ের পুনর্বাসনের কাজে হাজার হাজার রেলকর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার প্রশংসা করেছেন।৪১
রেফারেন্স: ১১ জুন ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ