You dont have javascript enabled! Please enable it!

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ৮টি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে

কৃষিমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ জনাব আতাউর রহমান খানের উত্থাপিত (তার অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে উত্থাপন করেন জনাব আবদুল্লাহ সরকার) প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, লােকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে খাদ্যের চাহিদাও নির্দিষ্ট হারে বাড়বে। বীজ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মেটানাের জন্য শতকরা ১৫ ভাগ আরাে অতিরিক্ত ফসল ফলানাে প্রয়ােজন হবে। মন্ত্রী বলেন যে, দেশের লােকসংখ্যা অনুপাতে যে পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি আছে তা পূরণ করার জন্য প্রথমে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ৮টি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। তা হলাে- (১) অধিক ফলনশীল ধানের আবাদ বৃদ্ধি (২) পর্যাপ্ত পরিমাণ সার ও কীটনাশক ঔষধের ব্যবস্থা, (৩) সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ (৪) বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন (৫) কৃষি ঋণ পর্যাপ্ত পরিমাণে ও ব্যাপক হারে বিতরণ (৬) কৃষকদের উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের শিক্ষা প্রদান (৭) ব্যাপকতর কৃষি গবেষণা এবং (৮) কৃষি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সম্প্রসারণ। মন্ত্রী আগামী বছরসমূহে লােকসংখ্যার সম্ভাব্য হার ও খাদ্যের চাহিদার একটি পরিসংখ্যানও পেশ করেন। তিনি জানান, ১৯৭৩-৭৪ আর্থিক সালে ৭ কোটি ৬২ লাখ লােকের জন্য খাদ্যের চাহিদা হবে ১ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার টন (২) ১৯৭৪-৭৫ সালে ৭ কোটি ৮৪ লাখের জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টন, (৩) ১৯৭৫-৭৬ সালে ৮ কোটি ৭ লাখের জন্য ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টন (৪) ১৯৭৬-৭৭ সালের ৮ কোটি ৩০ লাখের জন্য ১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার টন (৫) ১৯৭৭-৭৮ সালের ৮ কোটি ৫৩ লাখের জন্য ১ কোটি ২৯ লাখ টন।
কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষায়তন : নােয়াখালীর জনাব নুরুল হকের এক প্রশ্নের জবাবে জনাব কৃষি মন্ত্রী জানান যে, চলতি আর্থিক বছরে নােয়াখালী জেলার চৌমুহনীতে কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করার কোনাে কর্মসূচি সরকার গ্রহণ করেনি। এ সম্পর্কিত এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন যে, আগামী প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনায় দেশে ৫টি কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করা হবে। কৃষিমন্ত্রী সমীপে জনাব নুরুল হক ও জনাব আতাউর রহমান খান উত্থাপিত প্রশ্ন প্রসঙ্গে সম্পূরক প্রশ্নাবলি উত্থাপন করেন জনাব আলী আশরাফ, জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব জালাল আহমদ, জনাব মঈনুদ্দীন, জনাব আবদুল মালেক খান, জনাব আবদুস সাত্তার, বাদল রশিদ, জনাব কোরবান আলী, শাহ আবদুল হামিদ, জনাব আবদুল রশিদ, জনাব আমজাদ হােসেন, জনাব মােশাররফ হােসেন, ডাক্তার ফজলুর রহমান, জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী, জনাব আবদুল বারী প্রমুখ।
পতাকা জয় বাংলা সম্বলিত ভারতীয় ডাকটিকিট : ভারতে বাংলাদেশের পতাকা ও জয় বাংলা শব্দদ্বয় সম্বলিত টিকিট সম্পর্কে জনাব আতাউর রহমানের পক্ষ থেকে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। এর জবাবে ডাক, তার ও টেলিযােগাযােগ বিভাগীয় মন্ত্রী জনাব মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী বলেন যে, আমাদের জানা মতে ভারতীয় ডাক ও তার বিভাগ বাংলাদেশের পতাকা ও জয় বাংলা সম্বলিত হিন্দী ও ইংরেজিতে মুদ্রিত ডাকটিকিট সম্প্রতি চালু করেছেন। এই ডাক টিকিট বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট হিসেবে গত ১০ এপ্রিল চালু করেন। মন্ত্রী বলেন যে, দুটি বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্বরূপ একটি বন্ধু রাষ্ট্রের পক্ষে অপর বন্ধু রাষ্ট্রের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা বিষয়াদি স্মরণে এ ধরনের ডাকটিকিট প্রচলন করার নীতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং এর বহু নজির আছে। এ প্রসঙ্গে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান যে, ভারতের মহাত্মা গান্ধীর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে কয়েকটি দেশ স্মারক ডাকটিকিট বের করেছিল। ইরানের ওপর সাবেক পাকিস্তান প্রকাশ করেছিল একটি স্মারক ডাকটিকিট। ভারত সম্পর্কে আমাদের দেশে কোন স্মারক ডাকটিকিট চালু করা হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে জনাব ওসমানী বলেন যে, এখনাে করা হয় নি। ভবিষ্যতে করা হবে কিনা সম্পর্কে আরেক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যত বাণী করতে আমি আপাতত অক্ষম।
কাপ্তাইর মাছ : মৎস্য সম্পর্কে শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবত জানান যে, ১৯৭২-৭৩ আর্থিক বছরে মে মাস পর্যন্ত কাপ্তই হ্রদ থেকে মােট ৭১ হাজার ৭৭৭ মণ মাছ ধরা হয়েছে। সরকার এর রয়েলিটি বাবদ পেয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা।৩৫

রেফারেন্স: ৯ জুন ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!