You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.06.07 | ব্লিৎস এর সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

ব্লিৎস এর সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার

নয়াদিল্লি। বিশ্ব আদালতে পাকিস্তানের ধর্না দেয়া সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীর বিচারে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তে কোনাে পরিবর্তন হবে না। তারা বাংলার মাটিতে গণহত্যা চালিয়েছে। মহিলাদের ধর্ষণ করেছে, ছাত্র বুদ্ধিজীবী চিকিৎসকদের খুঁজে বের করে হত্যা করেছে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে। নয়, তারা যে জঘন্য অপরাধ করেছে তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা এবং ভবিষ্যৎ বংশধররা। যাতে এই দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেজন্যই আমরা তাদের বিচার করছি। সাপ্তাহিক ব্লিৎস পত্রিকার দিল্লি ব্যুরাে প্রধান শ্রী এম রাঘবনের সাথে গত ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান জোর করে হাজার হাজার বাঙালিকে আটক রেখে নির্যাতন করছে। ভারত ও বাংলাদেশে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের তত্ত্বাবধান করার জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে সুযােগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের দেখাশােনা করার অনুমতি দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিশ্ব বিবেক সাড়া না দেয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, অতীতে পাকিস্তানের কোনাে নীতির বালাই ছিল না। বর্তমানেও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে কিনা তা একমাত্র আল্লাহ-ই জানেন। এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তান যুদ্ধবন্দিদের সত্যি ফেরত চায় কিনা আমরা জানি না। যে ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধের জন্য বিচার করা হবে তাদের জন্য জনাব ভুট্টো ৯০ হাজার বন্দিকে ফেরত নিতে অস্বীকার করছেন। ভুট্টোর মনের গভীরে কি আছে তা নির্ণয় দুঃসাধ্য। তিনি বলেন, আপনারা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম শুনেছেন। যে একবার রক্তের স্বাদ পেলে শিকারের জন্য পাগল হয়ে ওঠে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থাও তেমনি। তারা একবার ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে, কাজেই এখন ক্ষমতার লােভেই উন্মত্ত থাকবে। এটাই পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ বিপদ। ভুট্টোর প্রতি বিদেশি শক্তির চাপ থাকার সম্ভাবনাও বঙ্গবন্ধু উড়িয়ে দেননি। দেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের জনগণ নিশ্চয়ই দুর্দশা ভােগ করছে। তবে আমরা এসব সমস্যার বিরুদ্ধে অবিরাম লড়াই করে চলেছি। বিরােধী দলগুলাে যে এই পরিস্থিতির সুযােগ নিতে চেষ্টা করবে তাতে তিনি মােটেও ভীত নন। চোরাকারবারী ও কালােবাজারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদের কোনাে জাত নেই। এরা ভারতেও আছে, বাংলাদেশেও আছে। তবে উভয় দেশের সরকারকে তাদের সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে হবে। সিমলা চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশেরই পাকিস্তানের সাথে তার সমস্যা সমাধানের অধিকার আছে। আমরা এই উপমহাদেশে শান্তি চাই এবং ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নাক গলাবার ইচ্ছা নেই বলেই সিমলা চুক্তির প্রতি আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি।২৪

রেফারেন্স: ৭ জুন ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ