ভারত ৬০ কোটি টাকার ঋণ দেবে
ভারত সরকার ঋণ ও সাহায্য হিসেবে বাংলাদেশকে মােট ৬০ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন। আগামী অর্থ বছরে (১৯৭৩-৭৪) এই অর্থ প্রদান করা হবে। ৫ দিনব্যাপী আলােচনা শেষে ভারতীয় পরিকল্পনা দফতরের মন্ত্রী শ্রী ডি. পি. ধর ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে যুক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করেন। যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সাহায্য হিসেবে ৪ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্য ঋণ হিসেবে ৬ কোটি টাকা ভারত সরকার দেবেন। সহজ বাণিজ্যিক শর্তে ভবিষ্যতে প্রয়ােজন বােধে আরাে ঋণ দেয়া হবে। যুক্ত বিবৃতিতে আরাে বলা হয়েছে যে, এছাড়াও বাংলাদেশের জন্য প্রয়ােজনীয় নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহের জন্য ভারত ১০ কোটি টাকা দীর্ঘ মেয়াদী সহজ শর্তে ঋণ দিতে প্রস্তাব করেছে। যুক্ত বিবৃতিতে আরাে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ প্রতিনিধিগণ দেশে সুতি বস্ত্রের নিদারুণ অভাবের কথা ব্যক্ত করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিগণ ভারত থেকে শাড়ি, লুঙ্গি ও সুতি বস্ত্র বােনার জন্য ১০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম বলেছেন, বাণিজ্যিক ঋণসমূহ ২ বছরের অতিরিক্ত সময়ের সুবিধাসহ ১৫ বছরের মধ্যে পরিশােধ করতে হবে। এবং এসব ঋণের সুদের হার শতকরা ৪-৫ টাকার মধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত উভয় দেশের পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী শ্রী ডি পি ধর। যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী সুতি বস্ত্রের চাহিদা পূরণের জন্য ভারত তুলা উৎপাদন এবং কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রয়ােজনীয় মাকো সংগ্রহে সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছেন। বাংলাদেশ যতদিন পর্যন্ত প্রয়ােজনীয় পরিমাণ তুলা উৎপাদনে সক্ষম না হবে ততদিন ভারত উপযুক্ত পরিমাণ তুলা রপ্তানির সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করতে প্রস্তুত। নিজের দেশে অভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের তাঁতিদের প্রয়ােজন মেটাবার জন্য ভারত তুলা প্রদানে সম্মত রয়েছে। শিল্প ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশে একটি সারকারখানা স্থাপনে সাহায্য দিতে এবং উদ্বৃত্ত সার দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কিনে নিতে প্রস্তাব করেছে। এছাড়া একটি কারখানা স্থাপন করে এবং প্রয়ােজনীয় চুনাপাথর সরবরাহ করে সিমেন্ট উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। উভয় দেশের প্রতিনিধিগণ এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা পরীক্ষার কাজ ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন। এ ছাড়াও কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সাপেক্ষে একটি স্পঞ্জ আইরন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা দিতে ভারত রাজি আছে বলে যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে। যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ রেলপথ পুনর্নির্মাণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ভারতীয় সাহায্য অব্যাহত রাখা হবে বলে ভারতীয় প্রতিনিধিগণ আশা প্রকাশ করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের রাস্তা মেরামত, রেলওয়ের জন্য ওয়াগনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহের জন্য ঋণ প্রদানের প্রস্তাব করেছে। ভারতীয় প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের রাস্তা মেরামত ও পুল নির্মাণের ক্ষেত্রে কারিগরি দিক ও সম্ভাব্যতা পরীক্ষা যৌথভাবে দুই দেশের ইঞ্জিনিয়ার কর্তৃক করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ পরিবহন ও সরবরাহ ক্ষেত্রে : উন্নয়নের জন্য ভারত ঋণ দিতে প্রস্তাব করেছে বলে যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচসালা পরিকল্পনার সহায়তা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ড. নুরুল ইসলাম বলেছেন এই বিষয়ে কোনাে আলােচনা হয়নি। তদুপরি পাঁচসালা পরিকল্পনা এখনাে চূড়ান্ত হয়নি। শিল্প ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শ্রী ধর বলেন, বাংলাদেশকে শিল্পক্ষেত্রে ঋণ দান বিষয়ে আলােচনা হয়েছে, কিভাবে দেয়া হবে তা আলােচনা হয়নি। শ্রী ধর পাঁচদিন বাংলাদেশে অবস্থানের। পর শুক্রবার দেশের পথে রওয়ানা হয়ে গেছেন।৯৯
রেফারেন্স: ২৫ মে ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ