You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.05.22 | মওলানা ভাসানী তার অনশন ভেঙেছেন | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

মওলানা ভাসানী তার অনশন ভেঙেছেন

মওলানা ভাসানী মঙ্গলবার রাত সােয়া আটটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনশন ভঙ্গ করেছেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ ৭টি রাজনৈতিক দল ও তার তিন দফা ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আপােসহীন সংগ্রামে প্রতিশ্রুতিদানের পরিপ্রেক্ষিতে আটদিন অনশনের পর আমরণ অনশন রত মওলানা ভাসানী অনশন প্রত্যাহার করেন। কাজী লেবুর রস পান করিয়ে মওলানা সাহেবের অনশন ভাঙান একজন দরিদ্র মজুর শ্রী মলই সরকার। এসময় উপস্থিত ছিলেন ন্যাপ নেতা ড. আলিম আল রাজি, কাজী জাফর আহমদ, বাংলাদেশ জাতীয় লীগের মিসেস আমেনা বেগম এবং ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ তার চিকিৎসা বাের্ডের সকল চিকিৎসকবৃন্দ। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী চিকিৎসকদের তরফ থেকে মওলানা সাহেবকে লেবুর রস পান করান।
সাতদলের যুক্ত বিবৃতি : সাত দলের এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, তারা গতকাল অপরাহ্ন সােয়া দুইটায় হাসপাতালে মওলানা সাহেবকে দেখতে যান। সেসময় তার সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলা হয় যে, তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এবং যে কোনাে মুহূর্তে কোনাে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বুলেটিনে আরাে বলা হয়, সকাল নটার দিকে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিবৃতিতে আরাে বলা হয় যে, এ অবস্থায় তারা মওলানা ভাসানীকে গােটা জাতির পক্ষ থেকে অনশন ভাঙার অনুরােধ জানান এবং যে উদ্দেশ্যে তিনি অনশন করেছেন তার জন্য আন্দোলন পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেন। তারা দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন প্রতিশ্রুতি দেন এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে মওলানা ভাসানী অনশন ভঙ্গ করেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলাদেশ জাতীয় লীগের জনাব আতাউর রহমান খান, মিসেস আমেনা বেগম, জাসদের মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এম এ জলিল, জনাব আ স ম আব্দুর রব, বাংলা জাতীয় লীগের জনাব অলি আহাদ, ন্যাপের কাজী জাফর আহমেদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
ভাসানীর বিবৃতি : অনশন ভঙ্গের পর হাসপাতালে তার কক্ষে মওলানা ভাসানীর এক বিবৃতি পাঠ করা হয়। বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী বলেন, তার তিন দফার ভিত্তিতে বিরােধী দলীয় নেতৃবৃন্দ দেশব্যাপী গণআন্দোলন করার প্রতিশ্রুতি দানের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অনশন ত্যাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, আগামী ৩ জুন তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখান থেকে দেশব্যাপী ঘেরাও আন্দোলন শুরু হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সমস্ত দল তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার সাথে আন্দোলন করবেন, তবে কেউ তার বরখেলাপ করলে জনগণের কাছে তারা বিশ্বাসঘাতক বলে চিহ্নিত হবেন। মওলানা ভাসানী যারা তার তিন দফা আন্দোলনে শরিক হয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানান।৮৯

রেফারেন্স: ২২ মে ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ