You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.05.12 | বাঙালির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস চাই- রাষ্ট্রপতি | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙালির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস চাই- রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী অতীতের বিকৃতি ও অপূর্ণতার ধুম্রজাল কাটিয়ে সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস প্রণয়নের জন্য ঐতিহাসিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের ৩ দিনব্যাপী তৃতীয় ইতিহাস সম্মেলন উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের ৪৪ জনসহ ভারত, অষ্ট্রেলিয়া এবং জার্মানির ২৮ প্রতিনিধি যােগদান করেন। আগামীকাল রবিবার ও সােমবার প্রতিদিন সম্মেলনের দুটো করে অধিবেশন বসবে। এতে প্রবন্ধ পাঠ ও আলােচনা করা। হবে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানির ৯ থেকে ২৮ জন প্রতিনিধি, সারা দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মােট ৪৪ জন প্রতিনিধি এবং পরিষদের ২৫০ জন সদস্য সম্মেলনে যােগদান করেছেন। রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, যে দশ বছরের বেশি সময়ে পরাধীন আমলে আমাদের ইতিহাসকে ঔপনিবেশিক স্বার্থের তাগিদে বিকৃত করা হয়েছে। তাই আমাদের জাতীয় সত্তার ঐতিহাসিকরূপ পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধির জন্যও তাকে বিশ্ব সমক্ষে উদ্ভাসিত করার উদ্দেশ্যে। ঐতিহাসিকদের প্রয়ােজনীয় গবেষণা ও সত্যানুসন্ধান করতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন যে, জাতীয় ইতিহাসের সুদূর অতীতের অধ্যায়গুলােকে সত্যের আলােকে প্রকাশিত করার সাথে সাথে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের গৌরবময় অধ্যায়ের পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহ ও তা উত্তর পুরুষের জন্যে সংরক্ষণ করতে হবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ সংগ্রাম ও সাফল্যের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচিত হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি নবজাগ্রত স্বাধীন জাতির কাছে স্বদেশের মাটি ও মানুষের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরার জন্যে আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, দেশের মানুষের বিচিত্র বিকাশ ও বিবর্তন ধারার ইতিকথা আঁধার পথে আলােকবর্তিকার নির্ভুল পথের দিশা দেখাবে। ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান ডক্টর আবদুল মতিন চৌধুরী তার প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন যে, ইতিহাস সমগ্র মানবজীবনের জীবন্ত আলেখ্য এবং ব্যক্তি ও সমষ্টিগত জীবনে ইতিহাসের সৃজনশীল কল্যাণময়। ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন যে, বাঙালি জাতির অতীত ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবদীপ্ত এবং ঐতিহ্যে সমুজ্জ্বল। তিনি বলেন যে, ইতিহাস যুগে যুগে সত্য তথ্যকে তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করে চলার পথে নির্দেশ দিয়ে থাকে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের ত্যাগতিতিক্ষার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বলেন যে, তারা অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
ড. এনামুল হক : সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতি প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. এনামুল হক তার ভাষণে ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের কাজে লেগে থাকার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, দিনে দিনে ইতিহাসের উপাদান দুর্লভ হয়ে পড়েছে। তিনি প্রকৃত ইতিহাস প্রণয়নের জন্যে আহ্বান জানান।
সম্মেলনে বাণী : প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে একটি বাণী পাঠিয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণীটি পড়ে শােনানাে হয়। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার ড. এ. আর. মল্লিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ আলী আহসান পৃথক পৃথক বাণী পাঠিয়েছেন। বাণীগুলাে পড়ে শােনানাে হয়।৪৫

রেফারেন্স: ১২ মে ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ