You dont have javascript enabled! Please enable it!

অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে- তাজউদ্দীন আহমদ

ঢাকা। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ আমাদের জাতীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়ােজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় অর্থনীতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। এর প্রতিকারার্থে তিনি যেসব ব্যবস্থার উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত বণ্টন ব্যবস্থা, উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ এবং সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত আর্থিক কর্মতৎপরতা অন্যতম। আজ সকালে স্বীয় বাসভবনে এনার বিশেষ প্রতিনিধির সাথে এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া আমাদের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন আমাদের পক্ষে কখনাে সম্ভব হবে না। তিনি স্বীকার করেন যে, আমাদের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
সুপারিশকৃত ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদ বিশ্লেষণ দিয়ে জনাব তাজউদ্দীন বলেন, বর্তমান সময়ের চরম চাওয়া হলাে আশাপ্রদ উৎপাদন। গভীর উদ্বেগের সাথে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের কলকারখানার উৎপাদনের দ্রুত অবনতি ঘটছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন প্রায় স্থিতিশীল। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মসম্পাদন সম্পর্কে মন্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে জনাব তাজউদ্দীন বলেন, স্বাধীনতার পর এ যাবত এরা ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি। এর ফলে আগামী মওসুমে পাট ক্রয়ের জন্য প্রয়ােজন ১০ কোটি টাকা বা এ পরিমাণ টাকা ঋণ দেয়া ব্যাংকের পক্ষে কঠিন হবে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা অধিক দ্রব্য উৎপাদন করতে না পারলে এবং অধিক পরিশ্রম না করলে আমাদের অর্থনীতির বর্তমান স্ফীতি রােধ করা সম্ভব হবে না। বাজারে জিনিসপত্রের অপ্রাচুর্য বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির কারণ বলে তিনি নির্দেশ করেন।
পরিশেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, সমন্বিত ও সুশৃঙ্খল অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আবশ্যক। এ সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন যে, উৎপাদন ও বণ্টনের সকল শিবিরকে পূর্ণ। একতার মাধ্যমে অবশ্যই কাজ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ জনাব তাজউদ্দীন বলেন, কলকারখানাতে অব্যাহত ধর্মঘট ও লক আউট লেগে থাকলে আমাদের রপ্তানি কাজের কোনাে মতেই উন্নতি হতে পারে না। তিনি বিশেষ করে বলেন, বহু জাহাজ আমাদের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে এসে পাট না নিয়েই ফিরে যাচ্ছে। পাট গাইট বাঁধা কেন্দ্রে ধর্মঘট লেগে থাকার দরুন পাটের গাইট তৈরি হচ্ছে না। এর থেকে অধিক দুঃখের আর কিছু হতে পারে না বলে তিনি বলেন। তিনি বলেন, যদি আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই এবং সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে শােষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জাতীয় লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই তবে আমাদেরকে এসব অবস্থা অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে।৪১

রেফারেন্স: ১১ মে ১৯৭৩, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!