You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৯৮০-‘৮১- এর অর্থনীতি | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৯ জুন ১৯৮১

সিরাজুল ইসলাম কাদির

১৯৮০-৮১ সালে সরকার কৃষি জমির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দেশব্যাপী খাল খনন ও পুনঃখনন কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এছাড়া, একই লক্ষ্যে, সরকার অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছর কৃষকদের ভর্তুকি প্রদত্ত মূল্যে কৃষি উৎপাদন ও ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন। সরকার গৃহীত এসব ব্যবস্থার ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর ১৬.৪৭ লক্ষ টন খাদ্যশস্য বেশী উৎপন্ন হয়। ১৯৭৯-৮০ সালে প্রকৃত উৎপাদন ছিল ১,৩৩.৪৯ লক্ষ টন এবং ১৯৮০-৮১ সালে মোট খাদ্যশস্যের আনুমানিক উৎপাদন হয় ১,৪৯.৯৬ লক্ষ টন। এই উৎপাদনের মধ্যে ১৩৪.৯৬ লক্ষ টন চাল এবং অবশিষ্ট (অস্পষ্ট) লক্ষ টন গম। এতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের বৃদ্ধির হার শতকরা প্রায় ১২.৩৪ ভাগ।
নীচে আউশ, আমন, বোরো ও গম উৎপাদনের গতিপ্রবাহ দেখানো হলঃ
আউশ— ১৯৮০-৮১ সালে ৩২.০৫ লক্ষ টন উৎপন্ন হয়। (অস্পষ্ট) তে উৎপাদন ছিল ২৮.০৯ লক্ষ টন। উৎপাদন বৃদ্ধির শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ।
আমন- এ বছর আমন ধানের উৎপাদন শতকরা প্রায় পাঁচ (অস্পষ্ট) বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৯-৮০ ও ১৯৮০-৮১ সালের উৎপাদন যথাক্রমে ৭৩.০৩ ও ৭৬.৯১ লক্ষ টন।
বোরো- গত বছর এই ধানের উৎপাদন ছিল ২৪.২৭ লক্ষ এবং এ বছরের উৎপাদন ২৬.০০ লক্ষ টন। উৎপাদন বৃদ্ধির শতকরা প্রায় সাত ভাগ।
গম- ১৯৮০-৮১ সালে ২০ লক্ষ একর জমিতে গমের (অস্পষ্ট) করে ১৫ লক্ষ টন গম উৎপন্ন করা হয়। গতবছর ১০.৭১ লক্ষ একর জমিতে চাষ করে ৮.১০ লক্ষ টন গম পাওয়া যায়। এতে উৎপাদন বৃদ্ধির হার শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ।
খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়লেও অর্থকতী ফসল পাটের উৎপাদন এবছর গত বছরের তুলনায় ১.৯০ ভাগ কমেছে। কি (অস্পষ্ট) পাটের উৎপাদন কমেছে তা সংশিষ্ট বিভাগ উল্লেখ করেন নি। গত বছর ও এবছর পাটের উৎপাদন যথাক্রমে ৫৯.৬৩ (অস্পষ্ট) ৫৮.৫০ লক্ষ বেল।
অন্য অর্থকরী ফসল চায়ের উৎপাদন (দেশীয় মোট উৎপাদনের শতকরা প্রায় দুই ভাগ চা থেকে আসে) ১৯৮০-৮১ (অস্পষ্ট) ৯ কোটি এক লক্ষ ৯০ হাজার পাউন্ড। গত বছরের উৎপাদন (অস্পষ্ট) ৮ কোটি ৪২ লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ড। গত বছরের তুলনায় এ বছরে চা উৎপাদন শতকরা প্রায় সাত ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থকরী ফসল আখের এ বছরের আনুমানিক উৎপাদন লক্ষ টন। গত বছর এর উৎপাদন ছিল ৬৩.৪০ লক্ষ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর আখের উৎপাদন শতকরা প্রায় ছয় বেড়েছে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ওষুধ, উন্নতমানের বীজ ও সেচ কার্য ব্যবহারের জন্যে কৃষিখাতে এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এ বছর ১০ লক্ষ টন সার ২,৬০৯ টন কীটনাশক ওষুধ, ৪.১৮ লক্ষ মন ধান ও গমের বীজ, ৪২০০০ টি শক্তিচালিত পাম্প, ২,৭০০ টি গভীর নলকূপ খনন, ২০০০ টি চালু করা হয় এবং ১২,৫০০টি অগভীর নলকূপ বিক্রি ও ১৮০০০টি চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৭৯-৮০ সালে খাল খনন কর্মসূচীর আওতায় ১৯৩টি খাল খনন ও পুনর্খনন করা এবং এর ফলে ৫.৫২ লক্ষ একর জমি সেচের আওতায় আনা হয়। চলতি সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭১টি খাল খনন করার ফলে ৫.৪২ লক্ষ একর জমি সেচের আওতাভুক্ত হয়েছে।
খাদ্য পরিস্থিতি— খোলা বাজারে খাদ্য শস্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য চলতি সালে বর্ধিত উৎপাদন থেকে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ জোরদার করে তা সরকারী গুদামে মজুদ করা হয়। এই মজুদ থেকে দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিতরণ করার ফলে এবছর দেশের সর্বত্র খাদ্য পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক ছিল। ১৯৮০-৮১ সালে দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদার পরিমাণ ১৪৭ লক্ষ টন ধরা হয়। অন্যদিকে এবছর খাদ্যশস্যের আনুমানিক উৎপাদন ১৪৯.৯৬ লক্ষ টন ধার্য করা হয়। এ থেকে বীজ ও অপচয় বাবদ শতকরা দশ ভাগ বাদ দিলে মোট উৎপাদন ১৩৪.৯৭ লক্ষ টনে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এবছর খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯.১০ লক্ষ টন। চলতি বছর ১ মার্চ সরকারী গুদামে প্রান্তিক মজুদ ও অবশিষ্ট খাদ্যশস্যের মজুদের পরিমাণ যথাক্রমে ১৩.৫৮ লক্ষ টন ও ১২.৭৩ লক্ষ টন।
খাদ্যশস্য সংগ্রহ— ১৯৮০-৮১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮.১৮ লক্ষ টন খাদ্যশস্য সংগৃহীত হয়েছে এবং এবছরের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১১.৯৫ লক্ষ টন। গত বছর ৩.৪৮ লক্ষ টন খাদ্যশস্য দেশের অভ্যন্তর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্যে সরকারকে প্রতি বছর ১৮-২০ লক্ষ টন খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়৷ এবছর ১১ লক্ষ টন খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানী করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে মার্চ মাস পর্যন্ত ৮.৮৬ লক্ষ টন সংগ্রহ করা হয়েছে। গত বছর এই সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ২৭.৩২ লক্ষ টন।
খাদ্য সামগ্রী বিতরণ— খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতায় আনার জন্যে সরমার এবছর ১৬ লক্ষ টন খাদ্যশস্য বিধিবদ্ধ রেশনিং সংশোধিত রেশনিং ও অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ১১ লক্ষ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করেছেন। এবছরের অবশিষ্ট তিনমাসে আরো ৫ লক্ষ টন বিতরণ করা হবে। এছাড়া ১৯৮০-৮১তে মার্চ পর্যন্ত ০.২৮ লক্ষ টন ভোজ্যতেল, ০.৪৯ লক্ষ টন চিনি এবং ০.৬৫ লক্ষ টন লবণ সরবরাহ করা হয়।
বিতরণ মূল্য- সাধারণত রেশনিং ব্যবস্থাত মাধ্যমে সরকারী খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়। ১৯৭৭-৭৮ সাল থেকে ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত খাদ্যশস্য বিতরণে রেশনিং ব্যবস্থায় যে মূল্যস্তর দেখা যায় তাতে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্বের বাজার খাদ্য সরবরাহের মন্দাভাব ও মুদ্রাস্ফীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে ১৯৭৯-৮০ থেকে ১১-৪-৮১ পর্যন্ত সময়ে চাল ও গমের রেশনিং মূল্য ও বাজার মূল্য দেখানো হল।

বছর (মন প্রতি বিতরণ মূল্য রেশনিং)
চাল-গম
১৯৭৯-৮০ ঃ১-৭-৭৯ থেকে ১২০.০০ ৯০
২-৫-৮০

৩-৫-৮০ থেকে ১০-৪-৮১। ১৪০.০০ ১১০.০০
১১-৪-৮১ ১৫৫.২০ ১৬৬.০০

শিল্প

জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান মাত্র শতকরা ৮.৪ ভাগ হলেও এদেশের অর্থনীতিতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মোট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ এই শিল্প খাত থেকে আসে।
দ্বিতীয় পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় শিল্পখাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে কাপড়, ওষুধ, কাগজের উৎপাদন বৃদ্ধি সহ কতগুলো পদক্ষেপের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
১৯৮০-৮১ সালে, গত বছরের তুলনায়, পাটজাত দ্রব্য শতকরা ১৩ ভাগ, সুতা শতকরা ১১ ভাগ, চিনি শতকরা ৫২ ভাগ, দেয়াশলাই শতকরা চার ভাগ, সিমেন্ট শতকরা পাঁচ ভাগ ট্রাক ও গাড়ি শতকরা ৪৩ ভাগ এবং কাঁচা রাবারের উৎপাদন শতকরা ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে নিউজপ্রিন্ট শতকরা ১৭ ভাগ টি এস পি শতকরা ছয় ভাগ ইউরিয়া শতকরা চার ভাগ, এমোনিয়াম সালফেট শতকরা ১০ ভাগ, রেডিও শতকরা ৩০ ভাগ, সাইকেল শতকরা ৬৪ ভাগচ সাবান শতকরা ৩৩ ভাগ,

বছর স্থাপিত টাকু শতকরা হারে চালু টাকু

১৯৭৯-৮০ ২৫,১৫৪ ২৪,১৩৭
১৯৮০-৮১ ২৫,৯৪৮ ২৯০৪১

চিংড়ী ও ব্যাঙের পা উৎপাদন শতকরা ২২ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, যান্ত্রিক গোলযোগ মজুদ ঘরের অভাব ও কারখানা বন্ধ থাকার জন্যে সারের উৎপাদন ব্যাহত হয়। খুলনা নিউজপ্রিন্টের উৎপাদন হ্রাস পায়। ১৯৭৯-৮০ সালের তুলনায় হিমায়িত চিংড়ী ও ব্যাঙের পার উৎপাদন চলতি সালে উদ্বেগ জনকভাবে শতকরা ৪৮ ভাগ হ্রাস পেয়েছে৷ এই পণ্যের প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য— উক্ত পণ্যের আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করায় উৎপাদন কমে। তবে পরে নিষেধাজ্ঞস তুলে নিলেও রপ্তানী এখনো বাড়েনি।
বেসরকারী শিল্প খাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৮০ এর জুলাইয়ে ১৩৯০ কোটি টাকার বৈদেশিম মুদ্রাসহ মোট ২৬৫০ কোটি টাকার মূলধন বিনিয়োগ প্রস্তাব করে পাঁচশালা মেয়াদী শিল্প তফসিল ঘোষণা করেন। একই লক্ষ্যে সরকার উদারনীতি ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেও জোরদার করার কথা ঘোষণা করেন। সরকারী খাতে রক্ষিত শিল্প সমূহের তালিকা থেকে ক্ষুদ্র চিনি কল এবং বস্ত্র বয়ন কল বেসরকারী খাত ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সংরক্ষণের জন্যে বৈদেশিক বেসরকারী পুঁজি বিনিয়োগ (উন্নয়ন ও সংরক্ষণ) নামে একটি বিল পাশ করা হয়। রপ্তানীমুখী শিল্প

গড় বাজার মূল্য

চাল (মধ্যম) চাল(মোটা) গম

১৭৭.০০ ১৭৭.০০ ১২৫.০০

২০৫.০০ ১৯৫.১৮ ১১৫.৪০

স্থাপনের প্র‍য়াস তিনটি রপ্তানী প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হয়। এ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সরকার ১৯১.৪৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোট ৫০৪.৬০ কোটি টাকা পুঁজি ব্যয়ে ১৪৫০টি শিল্প ইউনিট মঞ্জুর করেন। এবছর প্রথম নয় মাসে ৯.২৪ কোটি টাকা পুঁজি ব্যয়ে ১৪টি বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
পাট শিল্প- বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৬৮ ভাগ পাট শিল্পের মাধ্যমে অর্জিত হয়। সারা বিশ্বের পাট উৎপাদনকারী ও রপ্তানীকারী দেশ সমূহের মোট রপ্তানীর শতকরা ৪৫–৫০ ভাগ বাংলাদেশ রপ্তানী করে। ১৯৮৯-৮১ সালে পাট শিল্পে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬.১১ লক্ষ টন, তবে এবছর ৫.৯০ লক্ষ টন, অর্থাৎ লক্ষ্য মাত্রার শতকরা ৯৬.৬১ ভাগ পাটজাতদ্রব্য উৎপন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ১৯৭৯-৮৪ সালে প্রকৃত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৫.২২ লক্ষ টন। এবছর, গতবছরের তুলনায় শতকরা ১৩ ভাগ বেশী উৎপন্ন হবে। নীচে গত দুই বছরের স্থাপিত টাকু ও চালু টাকু এবং বিভিন্ন দ্রব্যের উৎপাদন দক্ষতা অর্জনের হিসেব দেয়া হল।

স্থাপিত টাকুর উৎপাদন ক্ষমতা।

হেসিয়ান সেকিং কার্পেট বেকিং কাপড়

৫১ ৬৬ ৪৬
৪৭ ৫৯ ৫৫

উপরের সারণী থেকে এটি সুস্পষ্ট যে স্বাভাবিক কর্ম দক্ষতার অবনতি হয়েছে। স্থাপিত টাকুর কর্মদক্ষতা অবনতিনীয়। পাট কলে সি শিফট চালু হওয়ায় এ ও বি শিফটের অস্থায়ী ও বদলী শ্রমিকদের সি শিফটে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং অনেক স্থানে অনভিজ্ঞ নতুন লোক নিয়োগ করতে হয়েছে। এটা উৎপাদন দক্ষতায় অবনতি এনেছে। এই ত্রুটি দূর করতে না পারলে পাটকলে আরও বেশী লোকসান হবেম এবছর মার্চ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিশ্রাট, ধর্মঘট ও বন্ধ ঘোষণার কারণে ২০,২০৬ টন এবং গতবছর একই কারণে ৬৫,২৪০ টন পাটজাত দ্রব্য কম উৎপন্ন হয়৷ এবছর পাট শিল্পে ১,৬৬,৪৪৪ জন শ্রমিক কর্মরত ছিল। এবছর মার্চ পর্যন্ত ৩.৬০ লক্ষ টন পাটজাত দ্রব্য রপ্তানী করে ৪৪১.৬৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। অবশিষ্ট তিন মাসে ৫.২৫ লক্ষ টন রপ্তানী করে আরো ৬৪৬ কোটি টাকা অর্জন করছে। এবছর এই খাতে ৪১.০৪ কোটি লাভ হবে বলে আশা করা যায়। গত বছর লাভের পরিমাণ ছিল ১১৬.৬৬ কোটি টাকা।
এ পর্যন্ত মোট তিনটি পাটকল তাদের পূর্বের মালিকদের ফেরৎ দেয়া আরো তিনটি ইউনিট নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
বস্ত্র শিল্প ১৯৮০-৮১ সালে বাংলাদেশ বস্ত্রকল সংস্থা ১২৯৯ লক্ষ পাউন্ড সুতা (৩২ কাউন্ট ভিত্তিক) এবং ১০৪৯ লক্ষ গজ কাপড় (৫৪ পুক ভিত্তিক) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়৷ এবছর প্রথম নয় মাসে ৯১৯.৭৮ লক্ষ পাউন্ডে সুতা ৬৬৫.২৭ লক্ষ গজ কাপড় উৎপন্ন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সুতা ও কাপড়ের ক্ষেত্রে যথাক্রমে শতকরা চার ভাগ ও ১১ ভাগ ঘাটতি হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার প্রধান কারণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও শ্রমিকের অনুপস্থিতি। এ বছর মার্চ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্যে গড়ে ৫৩৫৬৬ টাকু এবং ২২১টি তাঁত বন্ধ ছিল।
এবছর ৭৮৫ লক্ষ পাউন্ড সুতা এবং ৮৮৮ লক্ষ গজ কাপড় বিক্রি করে যথাক্রমে ২৫৪.৮৩ কোটি এবং ৮০.১৬ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়েছে। এবছর বস্ত্র মিলে ৫৮,০৬৯ জন শ্রমিক কর্মরত ছিল। বস্ত্রকল সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গতবছর বস্ত্রশিল্প সংস্থা ১৮.৬৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে এবং এ বছর ৮.৫৯ কোটি টাকা লোকসান দিতে পারে। লোকসানের জন্যে প্রধানত দায়ী— (১) আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় মূল্য প্রায় শতকরা ২৮ ভাগ বৃদ্ধি (২) বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর মূল্য প্রায় শতকরা ৫৭ ভাগ বৃদ্ধি, (৩) ব্যাংকে সুদের হার প্রায় ২৯.৬৯ ভাগ বৃদ্ধি, (৪) শ্রমিক কর্মচারীদের যাতায়াত ও অন্যান্য ভাতা বৃদ্ধি, (৫) বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও শ্রমিক দের অনুপস্থিতি এবং (৬) চালু বস্ত্র কলগুলোর মধ্যে দশটি কারখানা অত্যন্ত জীর্ণ ও পুরোনো অবস্থায় হওয়া
এপর্যন্ত নয়টি বস্ত্রকল থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করা এবং পুরোনো মালিকদের ফেরৎ দেয়া হয়েছে।
রসায়ন শিল্প- চলতি সালে রসায়ন শিল্প খাতের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে শতকরা তিন ভাগ বেড়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কারখানা বন্ধ থাকা এবং ধীর গতিতে মাল খালাস হওয়ায় সারের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। উত্তর বংগ কাগজের ফলে কাঁচা-মালের স্বল্পতা, বয়লারে গোলযোগ এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্যে কাগজের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। পারটেক্সের প্রধান ক্রেতা পাকিস্তান এর আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। অধিকন্তু পারটেক্স কারখানায় গরম পানির ট্যাংক বিধ্বস্ত হওয়ায় উৎপন্ন আরও কমে যায়। গত বছরের তুলনায় রসায়ন শিল্প খাতে সমাগ্রিক উৎপাদন সন্তোষজনম নয়।।এ বছর মার্চ পর্যন্ত এই শিল্প খাতে ৩০ কোটি টাকার মালামাল রপ্তানী করা হয়েছে। গত বছর অনুরূপ সময়ে ১৭.০৯ কোটি টাকার দ্রব্যাদি রপ্তানী করা হয়। এ বছরের শেষ নাগাদ মুনাফার পরিমাণ ১.৫১ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে, অথচ গত বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল ৯.৩১ কোটি টাকা।
টাকা। চিনি ও খাদ্য শিল– চলতি সালের শুরুতে চিনি ও খাদ্য শিল্পে ৪১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। তবে এরমধ্যে একটি ইউনিট পূর্ববর্তী মালিকের ফেরৎ দেয়ায় এখন চালু শিল্পের সংখ্যা ৪০ এ দাঁড়িয়েছে। এরমধক্সে ১৪টি চিনির কল বাকিগুলো অন্যান্য ধরনের কল।
গত বছরের ৯৩,২৪৪ টন চিনি উৎপাদনের স্থলে এ বছর ১,৪২,০০০ টন চিনি উৎপন্ন হয়েছে। বৃদ্ধির হার শতকরা ৫২। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ১,৫৩;০০০ টন। চিনি উৎপাদনের মোট ক্ষমতা ১,৬২,০০০ টন। কয়েকটি মিলে আখ সরবরাহের স্বল্পতা হেতু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি।
এবছর প্রথম নয় মাসে চিনি শিল্পখাতে ১৮৬.৪৯ কোটি টাকার মালামাল বিক্রি হয়েছে। গত বছর চিনি ও খাদ্য শিল্পখাতে ২৭.৪৭ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানী করা হয়, এবছর রপ্তানীর পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮.১৬ কোটি টাকা। হিমায়িত চিংড়ী ও ব্যাঙের পায়ের রপ্তানীর স্বল্পতা, চিনি ও খাদ্য শিল্পে রপ্তানী মূল্য হ্রাসের প্রধান কারণ। গত বছরের ১৩.৩৭ কোটি টাকা মুনাফার স্থলে এবছর ৩২.৭৯ কোটি টাকা লাভ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় শতকরা ১৪৫ ভাগ বেশী।
সিমেন্ট- দেশের দুটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী মোট সিমেন্ট সরবরাহের শতকরা ৪০ ভাগ যোগান দেয়। বাকি শতকরা ৬০ ভাগ আমদানী করতে হয়। এবছর ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ১.২৫ লক্ষ টন সিমেন্ট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করলেও এ পর্যন্ত ০.৯৫ লক্ষ টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয়েছে। গত বছর এই ফ্যাক্টরীতে ১.২৬ লক্ষ টন সিমেন্ট উৎপন্ন করা হয়। চট্টগ্রাম ফ্যাক্টরীতে এবছর ২.৭০ লক্ষ টন সিমেন্ট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে এবং গত নয় মাসে ১.৫৫ লক্ষ টন সিমেন্ট উৎপাদন করা হয়েছে।
পেট্রোলিয়াম— বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ান কর্পোরেশন অপরিশোধিত তেল আমদাবী এর পরিশোধন, দেশিব্যাপী বিতরণ এবং উদ্বৃত্ত পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য রপ্তানী করে থাকে। ইস্টার্ন রিফাইনারী বাংলাদেশের একমাত্র তেল শোধনাগার। এই শোধনাগারের বার্ষিক তেল ক্ষমতা ১.২৫ মিলিয়ন টিন। ঘাটতি পরিশোধিত তেলের চাহিদা পূরনের জন্যে, অপরিশোধিত তেল আমদানী করে সিংগাপুরের একটি রিফাইনারীতে পরিশোধন করা হয়। এ বছর প্রথম নয় মাসে সিংগাপুরের রিফাইনারীতে ৭.৫০ লক্ষ মেট্রিকটন অপরিশোধিত তেল শোধন করা হয়েছে। এসময়ে দেশে ৭৪,৯৪৫ মেট্রিকটন পরিশোধিত কেরোসিন তেল; ১,৫০,২০০ মেট্রিক টন হাইস্পীড ডিজেল, ৩৯.৭৮৭ মেট্রিক টন জিপি— ১ তেল আমদানী করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারীতে এবছর প্রথম নয় মাসে ৯.৮৯ লক্ষ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানী এবং ৯.৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন তেল পরিশোধন করা হয়।
গ্যাস- তিতাস গ্যাস ট্রাসমিশন ও বিতরণ কোম্পানী এবছর সিলেট শহর, হবিগঞ্জ চা বাগান, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ভৈরব বাজার এলাকায় গ্যাস সংযোগজের কাজে হাত দিয়েছে। এ পর্যন্ত ১,২৮,০০০টি গ্যাস সংযোজন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সার কারখানা, চারটি বিদ্যুৎ স্টেশন, একটি সিমেন্ট কারখানা ৪৯৪টি বিভিন্ন শিল্প ও ইটখোলা এবং ১২৫০০০টি গৃহ। চলতি সাল পর্যন্ত ১০০০ মাইল গ্যাস পাইপ বসানো হয়েছে।
বেসরকারী শিল্পখাতে— ১৯৮০-৮১ সালে বেসরকারী শিল্প খাতের উন্নয়নকল্পে সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারী শিল্পখাত আরও বড় রকমের ভূমিকা যাতে পালন করতে পারে এজন্যে সরকার উদারনীতি ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ জোরদার করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।
নিম্নে বেসরকারী শিল্পখাতে উৎপন্ন বিভিন্ন পণ্যের খতিয়ান দেয়া হলঃ

প্রকৃত উৎপাদন

খাত পরিমাণ ১৯৭৮.৭৯ ১৯৭৯.৮০
কৃষি পাম্প (সংখ্যা) ৪৩১২ ১১,১৭০
এলুমিনিয়াম বাসনাদি (টন) ৫৯৭৯ ৫৮৫৮
ড্রাইসেল ব্যাটারী (গ্রুপ) ৯১,৩২৯ ১০২;৭৩৩
বৈদ্যুতিক বাতি (লক্ষ সংখ্যা) ৫০.৭৯ ৫৪.৮৫
বৈদ্যুতিক পাখা (সংখ্যা) ৫২,৬৪৬ ৪৭,০০০
তামার বাসনাদি (লক্ষ ডজন) ১০.৯১ ১০.৯৭
ওষুধ (লক্ষ টন) ৮২১.৬৮ ১০১৯.১৯
সাবানঃ
ক) কাপড় সাচা (টন) ১২,৫৬৬.৫৪ ১৪২১১.৪০
খ) গায়ে মাখা (টন) ৩০৫৮ ৩৪০৭
নিরাপদ দেয়াশলাই (লক্ষ গ্রুস) ৩১.৩৩ ৩৩.৫০
সিগারেট (মিলিয়ন শলা) ১৩১৬১.৫৯ ১৬৫০০

দ্রব্য মূল্যঃ চালঃ ১৯৮০ সালের মার্চ মাসের তুলনায় ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহীতে মোটা চালের মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৪.৮২%, ১২.৭৩%, ১.২০%, ০.৬৪%।

ডালঃ ঢাকা,চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহীতে মসুর ডালের পাইকারী গড়পড়তা দাম ১৯৮০-র মার্চের তুলনায় ১৯৮১ র মার্চে যথাক্রমে ৩০.০৩%, ৪৪.৪৪%, ৫০.৮৩% এবং ২৩.১৯% বেড়েছে।

তেলঃ দেশের উল্লেখিত চারটি নির্ধারিত কেন্দ্রে সরষে তেলের দাম ১৯৮০-র মার্চ মাসের তুলনায় ১৯৮১ এর মার্চে যথাক্রমে ১২.২৪%, ২৫.৭৩%, ৩.৬৩% এবং ২৬.৬২% বেড়েছে।

নিম্নমানের পাটের জরুরী মজুদ গড়ে তোলা এবং পেট্রোল ও পেট্রোলজাত দ্রব্যাদি আমদানীর জন্যে অধিকহারে ব্যাংক ঋণ ব্যবহারের দরুন বৃদ্ধিপ্রপাত মুদ্রা সরবরাহ (লিকুইডিটি) খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেট্রোলিয়াম গম ভোজ্য তেল বিলেট সার সিমেন্ট এবং অন্যান্য কাঁচামালের আমদানীর মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশে খাদ্যশস্য সার কাগজ নিউজপ্রিন্ট বিদ্যুৎ পানি পেট্রোল ও পেট্রোলজাত দ্রব্যাদির সরবরাহ মূল্যবৃদ্ধি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এবছর আলোচ্য সময়ে গড়ে বাসস্থান ও গৃহস্থায়ী ১৪.২৪%, খাদ্য ৮.৩৪%, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ ২৫.৬২% বস্ত্র ও পাদুকা ১৬.০৯% এবং অন্যান্য জিনিসের দাম ১০-১৩% বেড়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা রোধের লক্ষ্যে চাহিদা ও সরবরাহ উভয় ক্ষেত্রে ১৯৮৯-৮১ সালের শুরুতে বিভিন্ন কার্যকরী ব্যবস্থার সঙ্গে মুদ্রানীতি কাঠামোতে পুনর্বিন্যাস করা হয়। আমদানী মারফত দেশের অভ্যন্তরীণ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের সরবরাহ অবস্থার উন্নতির জন্যে এবছর আমদানী নীতি শিথিল করা হয়। এবছর গত বছরের বরাদ্দকৃত টাকার চেয়ে শতকরা ২৬.৩ ভাগ বেশী টাকা বরাদ্দ করা হয়। একই সঙ্গে শিল্প উৎপাদন বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্যে চলতি সালের আমদানী নীতিতে ভোগ্যপণ্য শিল্পজাত কাঁচামাল, এবং খুচরো যন্ত্রাংশের যথোপযুক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া ভোজ্য তেল বৈদ্যুতিক পাখা ও বাল্ব প্রভৃতি দ্রব্যের উপর আরোপিত করের পুনর্বিন্যাস, হাঁস,মুরগী জাত দ্রব্যাদির রপ্তানী নিষিদ্ধকরণ এবং শাক সবজী রপ্তানীর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
দুগ্ধজাত খাদ্য, অশোধিত সয়াবিন তেল, তেলবীজ ভেষজ বীজ, নারকেল তেল, ওষুধ বইপত্র ও সাময়িক অস্ত্রপচারের যন্ত্রপাতি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও শিক্ষাপোকরণ, টায়ার ও টিউব বিভিন্ন প্রকার যানের যন্ত্রপাতি, সেচ কাজের জন্যে বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।
ও, জি এল এর অধীনে আমদানীর ব্যবস্থা করা হয়৷ দেশে অধিক পরিমাণে সিমেন্টের চাহিদার প্রেক্ষিতে বেসরকারীখাতে সিমেন্ট আমদানীর ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া এবছর চিনি, ডাল, লবণ, আদা ইত্যাদি ওয়েজ আর্নার স্কীমে আমদানী করে দেশের চাহিদা পূরণ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হয়।

তথ্য নির্দেশঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জরীপ, ১৯৮০-৮১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!