দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও রােগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘােষণার আহ্বান রাষ্ট্রপতি
রাজশাহী। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী আজ ক্ষুধা, দারিদ্র এবং রােগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। প্রখ্যাত ফরাসী ঔপন্যাসিকচিন্তাবিদ আদ্রে মালরোকে অনারারি ডিলিট উপাধি দান উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ােজিত বিশেষ সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দান প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায় বিচার এবং মানবিক মর্যাদার আদর্শমালার ভিত্তিতে একটি উন্নততর ও পূর্ণাঙ্গ জীবন গড়ে তােলা এবং দারিদ্র, ক্ষুধা ও রােগের বিরুদ্ধে সংগ্রামের এক নয়া পর্যায়ে আজ আমরা প্রবেশ করেছি। রাষ্ট্রপতি বলেন, যুদ্ধ বা সংঘর্ষ এড়ানাের জন্যই বাংলাদেশের জনগণ শান্তি চায় না, বরং একে অপরকে জানার মধ্য থেকে যে গভীর প্রশান্তির জন্ম, বাংলাদেশের জনগণ সেই শান্তির প্রত্যাশী। তিনি বলেন, বিশ্বের বুকে এই কাক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আস্থার সাথে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজশাহী হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু বীরত্বপূর্ণ কাজ এবং বেদনাময় ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত গৌরবময় স্থান। তিনি বলেন, সেই সংকটময় দিনগুলােয় আমাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি আপনাদের সর্বময় সমর্থন আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, আজ আপনাকে এখানে সম্মানিত করতে পারছি। আপনার লাখ লাখ বন্ধু এবং অনুরাগীর পক্ষ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে আমি আপনাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, আমরা আপনার মাঝে পান্ডিত্য দেখেছি। আপনাকে একজন মুক্তমনা মানুষ হিসেবে দেখেছি এবং সর্বোপরি দেখেছি আপনাকে একজন। বিবেকবান মানুষ হিসেবে। আপনি একটি মানুষের সুপ্ত মহৎ গুণাবলি জাগ্রত করেছেন এবং অসৎ ও অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনার বস্তুবাদী, প্রগাঢ় মানবিক সাহিত্যকর্ম এবং আপনার সংগ্রামী জীবন দর্শনের মাধ্যমে আপনি মানুষকে আত্মবিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং দুর্ভাগ্যকে পরাজিত করার সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলেন, এই নির্মলতা, কমলতা, ত্যাগ ও দুঃখ বরণের মহৎ ও মানবিক অনুভূতি আপনার রচনাকে দিয়েছে উৎকর্ষ এবং আপনার জীবন দর্শনকে করেছে সক্রিয়তাবাদ। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি মনে করি এটা শুধু এখানে। উপস্থিত ব্যক্তিবর্গই নয় সমগ্র দেশবাসীর বিশ্বাস যে, আপনাকে সম্মান জানিয়ে আমরা সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানব জাতির লক্ষ্যকে নিয়ন্ত্রিত করার মানবিক বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের দুঃখ বরণকে আপনি জানেন। মানবের দুঃখ বরণ ও সাহসিকতা কাহিনির আর একটি পর্ব হয়ে এ দুঃখবণ টিকে আছে। এ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবন সংগ্রামের ঐতিহ্য নবতর সংযােজন, যা আপনার রচনাবলিতে বিস্তৃত হয়েছে, যাতে আপনি। ব্যক্তিগতভাবে অংশও নিয়েছেন। আপনার পূর্বাপর ভূমিকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনি আমাদের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আপনার সাড়া আপনার মতােই অনন্য, আপনি বলেছিলেন এখন বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা বা বিলাপ করার সময় নয়। এখন সময় হচ্ছে রণাঙ্গনে নেমে লড়াই করার। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী যােদ্ধা বাহিনী সংগঠনের জন্য আপনার উদ্যোগ আমাদের মুক্তিযােদ্ধাদের নতুন শীর্ষে বাড়িয়ে তুলেছিল। এই উদ্যোগ এতই তাৎপর্যপূর্ণ যে, চিরদিন আমাদের স্মৃতিতে তা সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। আগামী দিনগুলােতে এটা আমাদের চেতনাকে জোরদার করবে। আমাদের জোগাবে শক্তি, কারণ আমাদের লড়াই শেষ হয়নি; আমরা দারিদ্র, ক্ষুধা-ব্যাধির বিরুদ্ধে এবং সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদার আদর্শের আলােকে উন্নততর এবং পূর্ণাঙ্গ জীবনের জন্য আমাদের সংগ্রামের নয়া পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনার সফর উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রয়াসকে আরাে জোরদার করবে, এ ভবিষ্যৎ শুধু বাংলাদেশের জনগণের জন্যই নয়। এই ভবিষ্যৎ সারা বিশ্বের মানবতার জন্য। আপনার দীর্ঘ ও সুখী জীবন মানবজাতির মুক্তি ও আকাঙ্ক্ষার স্বার্থে উৎসর্গকৃত জীবন কামনা করছি।৬৮
রেফারেন্স: ২২ এপ্রিল ১৯৭৩, দৈনিক সংবাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ