বাংলাদেশে রুশ সাহায্যে লেনিনের নির্দেশিত নীতির বাস্তব ফলশ্রুতি- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন যে, প্রতিটি স্তরে সােভিয়েত সরকারের সার্বিক সাহায্য ও সহযােগিতা না পেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হতাে না। তিনি এই প্রসঙ্গে আরাে বলেন যে, বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে সােভিয়েত ইউনিয়নের এই সাহায্যদান কোনাে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, মহামতি লেনিনের নির্দেশিত নীতিরই বাস্তব ফলশ্রুতি। শুক্রবার সন্ধ্যায় সােভিয়েত সাংস্কৃতিক ভবনের উদ্বোধনী ও মহামতি লেনিনের ১০৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়ােজিত এক অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী উপরােক্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর সড়কে ৫১০ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত নবনির্মিত সােভিয়েত সাংস্কৃতিক ভবনের দ্বারােদঘাটন করেন। উভয় অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ সমাজতান্ত্রিক দূতাবাস কূটনীতিকগণ, কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ। নেতা কমরেড মণি সিং, সাধারণ সম্পাদক কমরেড আবদুস সালাম, শ্রমিক নেতা কমরেড অনীল মুখার্জি, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মােস্তফা সারােয়ার, বাংলাদেশ সােভিয়েত মৈত্রী সমিতি সভানেত্রী বেগম সুফিয়া কামালসহ বহু সাহিত্যিক, সংস্কৃতিবিদ ও ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। সাংস্কৃতিক ভবন মিলনায়তনে লেনিন জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবদুল মতিন চৌধুরী। এতে প্রধান অতিথি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সােভিয়েত রাষ্ট্রদূত আঁদ্রে ফোমিন বক্তৃতা করেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার বক্তৃতায় সােভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মহামতি লেনিনের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বলেন যে, লেনীন শুধু একটি বিপ্লবই সৃষ্টি করেন নি, একটি মতবাদকে যথাযথভাবে প্রয়ােগ ও সুপ্রতিষ্ঠিত করে পৃথিবীর জন্যে এক নতুন সভ্যতার দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। শিল্পমন্ত্রী ঢাকায় সােভিয়েত সাংস্কৃতিক ভবন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন যে, এর ফলে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সােভিয়েত জনগণের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবন ধারার পরিচয় লাভের সুযােগ পাবে। পরিশেষে শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল বলেন, আমাদের দুর্দিনের বন্ধু, বিপদের বন্ধু, আজকের বন্ধু ও ভবিষ্যতের বন্ধু সােভিয়েত রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাবে। সােভিয়েত রাষ্ট্রদূত মি. আঁদ্রে ফোমিন বলেন যে, সােভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের জনগণের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে জোরদার করার ক্ষেত্রে সােভিয়েত সাংস্কৃতিক ভবন একটি উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ। তিনি বলেন যে, এর মাধ্যমে উভয় দেশের বন্ধুত্ব আরাে বৃদ্ধি পাবে।
সাংবাদিক সম্মেলন : পূর্বাহ্নে সােভিয়েত দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রথম সেক্রেটারি ওয়াই এম কাতন সাংবাদিকদের কাছে ঢাকাস্থ সােভিয়েত সাংস্কৃতিক ভবনের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি জানান, এতে একটি পাঠাগার রয়েছে। যেখানে সর্ববিষয়ে বর্তমানে ১০ হাজার বই রয়েছে। যার সংখ্যা ৩০ হাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এখান থেকে বিনে খরচায় বই ধার নিতে পারবেন। মােট বইয়ের এক চতুর্থাংশ বাংলায় লেখা। মি. কাতন বলেন, সাংস্কৃতিক ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি মিলনায়তন হয়েছে, যার আসন সংখ্যা ২৫০। এখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া একটি প্রদর্শনী হলও রয়েছে। যেখানে আলােকচিত্র, পেইন্টিং প্রভৃতি প্রদর্শনী হবে। মি. কাতন আশা প্রকাশ করেন যে, সাংস্কৃতিক ভবনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণকে আরাে ভালােভাবে জানতে পারবে।
রেফারেন্স: ২০ এপ্রিল ১৯৭৩, দৈনিক সংবাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ