ত্রাণসাহায্যের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা মঞ্জুর
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৃহস্পতিবারের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত ফরিদপুরের কতিপয় এলাকা রােববার পরিদর্শন করেন। হেলিকপ্টার যােগে ৩ ঘণ্টাব্যাপী পরিদর্শনকালে বঙ্গবন্ধু ফরিদপুর, গােপালগঞ্জ ও গােয়ালন্দ মহকুমার ৩টি স্থানে অবতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ রেডক্রসের প্রধান গাজী গােলাম মােস্তফা, ফরিদপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জনাব শামসুদ্দিন মােল্লা ও জনাব নাজির আহমদ তালুকদার বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দুর্গত লােকদের জন্য ১ লাখ টাকা মঞ্জুর করেন। সরকার কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত প্রতিটি পয়সা যেন অভাবী লােকদের কাছে পৌছে তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য তিনি স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সাহায্য কার্যক্রম পুরােদমে চলছে। এ যাবত সরকার গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরি হিসেবে ৫ লাখ টাকা এবং নগদ মঞ্জুরী হিসেবে অর্ধ লাখ টাকা মঞ্জুর করেছেন। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত্র পরিবারগুলাের মধ্যে ১ হাজার শাড়ি, ৩শ লুঙ্গি, ৬শ শিশু বস্ত্র এবং ৪ হাজার মণ খাদ্য শস্য বণ্টন করেছেন। এছাড়া ১ হাজার লণ্ঠন, ২শ থলি গুড়া দুধ, ২শ কার্টুন শিশু খাদ্য ও ২শ তাবু বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত অঞ্চলে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রী সকল প্রােটকল বিধি ভঙ্গ করে দুর্গত জনসাধারণের সাথে মিশে যান। হেলিকপ্টার অবতরণের সাথে সাথে জনসাধারণ তাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে থেকে বিলাপ ও কান্নার ধ্বনি উখিত হয়। তাদের শােচনীয় দুর্দশার কথা তারা ব্যক্ত করতে থাকে সােচ্চারে। দৃশ্যত ভাবাবেগে উদ্বেলিত বঙ্গবন্ধুর চক্ষু সজল হয়ে ওঠে, ঘূর্ণিঝড়ে পরিবারের ৭জন লােককে হারানাের ব্যথায় মূহ্যবান এক লােকের সাথে বঙ্গবন্ধু বাকরুদ্ধ কণ্ঠে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে নিজ বক্ষে টেনে নিয়ে সান্ত্বনা দানের চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর সদর মহকুমার নগরকান্দা থানার রামনগর, গােপালগঞ্জ মহকুমার বালিয়াকান্দি থানার লাকলামান্দিয়া গ্রামে অবতরণ করেন। দুর্গত এলাকার বিভিন্ন অংশে খাদ্য দান, সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য কয়েকটি ত্রাণ শিবির খােলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ফরিদপুর জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি গ্রামে প্রায় ১২২৯ জন লােক আহত হয়েছিল। তন্মধ্যে ২শ ৪২ জনের অবস্থা মারাত্মক। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা ৪০ বলে জানানাে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গৃহের সংখ্যা ২৭৩৫টি, তন্মধ্যে ৫৪৭টি গৃহ সম্পূর্ণরূপে উড়ে গেছে। গােপালপুরে ৯ ব্যক্তি মারা গেছে। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৭ জন দিদার মিরের পরিবারের লােক। সমগ্র এলাকার জমির ফসল শতকরা ৯০ ভাগ বিনষ্ট হয়েছে। বিনষ্ট ফসলের মধ্যে ইক্ষু, ইরি রয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় কয়েকটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ১১ জন ডাক্তার, ২৩ জন নার্সকে ঢাকা থেকে পাঠানাে হয়েছে। বাংলাদেশ রেডক্রস উপদ্রুত এলাকায় ৬টি চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে বৃহস্পতিবারের ঝড়ে আহত লােকদের চিকিৎসা চালাচ্ছে।৫৩
রেফারেন্স: ১৫ এপ্রিল ১৯৭৩, দৈনিক সংবাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ