You dont have javascript enabled! Please enable it!

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক জানমালের নিরাপত্তা বিধানের আশ্বাস

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ফলে সমগ্র কলকারখানা বন্ধ হয়ে আছে। সংঘর্ষ শেষে জানমালের নিরাপত্তার অভাবে শ্রমিক ফেডারেশনের সমর্থক কয়েক সহস্র শ্রমিক তাদের বাক্স-পেটরা, হাঁড়িপাতিল ও বিছানাপত্র নিয়ে মিছিল করে এসে গণভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন। ফেডারেশনের নেতা কাজী জাফর আহমদ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ ও আলাপ-আলােচনা শেষে শ্রমিকদের জানান যে, প্রধানমন্ত্রী তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে জানমালের নিরাপত্তাসহ দু’দফা কার্যকরি করার আশ্বাস দিচ্ছেন। বাকি এক দফা নিয়ে আজ শুক্রবার পুনরায় আলােচনা করেন। এরপর সকল শ্রমিক কাজী জাফরের নির্দেশে রাত ৯টায় গণভবনের সম্মুখভাগ ছেড়ে স্টেডিয়ামের বারান্দায় রাত্রিবাসের আয়ােজন করে। হান্নান অভিযােগ করেন যে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে শ্রমিক ফেডারেশনের সহস্রাধিক লােক মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে টঙ্গীর ৪-৫টা মিলে হামলা চালায়। জনাব হান্নানের ভাষায়, ‘তারা জ্বালাে জ্বালাে আগুন জ্বালাে, শ্রমিক লীগ খতম করাে, আওয়ামী লীগ খতম করাে স্লোগান দিচ্ছিল। তিনি বলেন যে, এই খবর প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই টঙ্গী আঞ্চলিক শাখা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব কাজী মােজাম্মেল হক স্থানীয় লােকজন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় মিল এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কী কী অস্ত্র নিয়ে শ্রমিক ফেডারেশনের লােকরা আক্রমণ করেছে তা বিস্তারিত বিবরণ জনাব হান্নান দিতে পারেন নি। তবে তিনি জানিয়েছেন যে, এই সব বহিরাগত শ্রমিক বাসে করে এসেছিল।
শ্রমিক ফেডারেশনের বক্তব্য : বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন যে, সকাল বেলা টঙ্গী শিল্প এলাকায় জাতীয় শ্রমিক লীগের গুন্ডা বাহিনী অতর্কিতে শ্রমিকদের উপর সশস্ত্রভাবে আক্রমণ চালায়। তাদের ভাষায় স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ গুন্ডাদের প্রতিরােধের কোনাে চেষ্টা তাে করেনই নাই বরং তাদের পক্ষ অবলম্বন করে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ : ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিজেকে দাবি করে গণভবনের সামনে উপস্থিত জনৈক শ্রমিক আমাকে জানান যে, সকাল ৮টার দিকে কয়েকশত বহিরাগত লােক লাঠিসোটা, রড, রাইফেল, এলএমজি, পিস্তল, অলিম্পিয়া, মনু টেক্সটাইল মিল, নিকাত জুট মিলসহ কয়েকটি কারখানায় কর্মরত সাধারণ শ্রমিকদের আক্রমণ করে। তারা গ্রেনেড চার্জ করে অলিম্পিয়ার দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে। জিন্নাত মিলের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের নির্মমভাবে প্রহার করে। তিনি বলেন, এ সময় বেশ গােলাগুলির শব্দ হয়। শ্রমিকটি আরাে বলেন, এ সময় প্রাণের ভয়ে শ্রমিকরা যখন কলােনিতে ঢােকে তখন সেখান থেকে জোর করে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের আর কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি। কারাের কোনাে মৃত লাশ দেখেছেন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন দেখেন নি। অপর এক শ্রমিক বলেন যে, অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলের ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক ফেডারেশন আরশাদ হােসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করার ফলেই শ্রমিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর জনৈক ফেডারেশনের আরাে ৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করার ফলে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। একজন ক্রন্দনরত শ্রমিক বলেন যে, পুলিশ সাহায্য না করলে ও এস্কর্ট করে ঢাকায় আসার সুযােগ না দিলে বহু শ্রমিক নিহত হতাে। শ্রমিকটি অভিযােগ করেন যে, স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী মােজাম্মেল হকের নেতৃত্বে সহস্রাধিক লােক মিল বাজার গেটে তাদের আক্রমণ করেছিল। তিনি বলেন যে, পুলিশ তাদের উপর কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অন্য একজন শ্রমিক বলে যে, জনৈক শ্রমিককে জিন্নাত মিলের বয়লারে ঢুকিয়ে মারা হয়েছে। টঙ্গী এলাকায় বহিরাগতদের সকল দোকান-পাট লুট করা হয়েছে বলেও কেউ কেউ অভিযােগ করেন।২০

রেফারেন্স: ৫ এপ্রিল ১৯৭৩, দৈনিক সংবাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!