You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হবার আহ্বান- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রতি ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্নিহিত মূল্য অনুধাবন ও ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত হবার আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার বিকালে মাদ্রাসার শিক্ষক সমিতি ও ইসলামী শিক্ষা সংস্কার কমিটির যুগ্ম সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু উপরােক্ত আহ্বান জানান। ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে দুদিনব্যাপী এই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে জোর দিয়ে বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির অনুকূলে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের প্রয়ােজন। জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন এবং বেকার সমস্যার দিকে নজর রেখে শিক্ষা কমিশনকে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা ছাত্র ও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রেও এরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে শিক্ষা কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় চার নীতির অন্যতম নীতি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যেকের ধর্ম প্রত্যেকে পালন করার স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, গত ২৫ বছরের মতাে আর কাউকেই ধর্মের নামে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ন্যায় ও নিরপেক্ষতার কথা বললে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী বলতাে অনৈসলামিক কাজ কিন্তু পাকিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নামে তারা অনৈসলামিক কাজ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে পাকিস্তান আমলে মদ সরাহ করা হতাে। রেস খেলা অনুমােদিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র বলে দাবি করে না কিন্তু এসব ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ আমরা নিষিদ্ধ ঘােষণা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। পাকিস্তানি আমলে বঙ্গবন্ধু তার রাজনীতির স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র নামটির জন্য আপত্তি করেছিলাম। কারণ আমি জানতাম যারা পাকিস্তানি নেতা তারা ইসলামী বিধিনিষেধ মেনে চলে না। আর গত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ইসলামের নামে বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আরাে বলেন, আমি মুসলমান হিসেবে গৌরবান্বিত। আমাদের অবশ্যই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা কী তা বুঝতে হবে এবং দৈনন্দিন জীবনে তা প্রয়ােগ করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষকে ভালােবাসা ও তার সেবা করা ইসলামের মূল মন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বলেন, গত হজ্ব মৌসুমে বাংলাদেশ সরকার ছয় হাজার লােককে হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সৌদি আরবের বাদশাহকে এ ব্যাপারে চিঠি লিখেছি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাজ করার জন্য তিনি ভারতীয় দূতাবাসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। দেশের পরবর্তী পরিস্থিতি বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের উপর বঙ্গবন্ধু গুরুত্বারােপ করেন। সমাজ কাঠামাের পরিবর্তনের কাজ করে যেতে বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানান। মওলানা আব্দুল রশিদ তর্কিবাগিশ এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসংখ্য প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যােগদান করেছেন।১১৫

রেফারেন্স: ৩০ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!