You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.03.26 | স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর বাণী | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর বাণী

জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির প্রতি এক বাণীতে বলেন যে, খাদ্য, বস্ত্র ও অর্থনৈতিক সংকটের মােকাবিলা করতে সমগ্র জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এ চ্যালেঞ্জ মােকাবেলার জন্য তিনি জনগণকে ক্ষেতে, খামারে ও কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির উদাত্ত আহ্বান জানান। জাতির পিতা প্রদত্ত বাণীতে আরাে বলেন যে, স্বাধীনতার দিনে আজকে শপথ হবে আমাদের দেশ গড়ার। দেশ গড়ার সংগ্রাম হবে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ও ক্ষেতে খামারে। এ দেশকে গড়তে হলে ফসল ফলাতে হবে, কলকারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হবে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মনােভাব বর্জন করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করে সততা নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র জাতিকে দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়ােগ করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু তার বাণীতে বলেন: এই দিনে বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে তাদের নিজেদের সত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলা মায়ের ত্রিশ লক্ষ সন্তানের রক্ত, শত শত মা বােনের ইজ্জত আর অসংখ্য মায়ের অশ্রুধারার বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা শােষণের বিরুদ্ধে শােষিত স্বাধীনতা, এ স্বাধীনতা দুঃখী মানুষের স্বাধীনতা। আজকের এই শুভলগ্নে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেইসব বীর সন্তানদের যারা এদেশের মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আর স্মরণ করি তাদের যারা পঙ্গু হয়েছে, আহত হয়েছে। তাদের ত্যাগ জাতির ইতিহাসে চিরদিন অমর হয়ে থাকবে। আমি যখন পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলার মাটিতে ফিরে আসি, তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলা এক শ্মশান বাংলায় পরিণত হয়েছিল। বিগত ১৫ মাসে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহ ও অন্যান্য সহানুভূতিশীল দেশের সাহায্যে এবং জনগণের সক্রিয় সহযােগিতায় দেশকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও বিশৃঙ্খলার হাত থেকে রক্ষা করতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে ৪টি মূলনীতির ভিত্তিতে একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এবং এরই ভিত্তিতে বাংলার মাটিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার জনগণ প্রমাণ করেছে যে, বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। বিধ্বস্ত বাংলায় পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়ে দেশ গড়ার সংগ্রাম। আরাে কঠিন। আজকের শপথ হবে আমাদের দেশ গড়ার সংগ্রামের। দেশ গড়ার সংগ্রাম হবে। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ক্ষেতে-খামারে। এ দেশকে গড়তে হলে ফসল ফলাতে হবে, কলকারখানায়। উৎপাদন বাড়াতে হবে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির মনােভাব বর্জন করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ। করে সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র জাতিকে দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়ােগ করতে হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া জাতির রাজনৈতিক মুক্তি অর্থহীন। দুইশ বছরের সাম্রাজ্যবাদী ও ২৪ বছরের ঔপনিবেশিক শােষণের ফলে মানুষ আজ অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা প্রভৃতি নানা সমস্যার সম্মুখীন-এ সমস্যাসমূহ আমাদের সামনে এক চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। যে ঐক্য, শক্তি, মনােবল নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্যে বাংলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তেমনিভাবে আসুন। এবার বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানাের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে চ্যালেঞ্জের মােকাবেলা করি। আমরা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী, আমরা দুঃখী মানুষের কল্যাণে বিশ্বাসী, আমরা বিশ্বাসী জোট বহির্ভূত সক্রিয় নিরপেক্ষতায়। আমরা পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযােগিতায় বিশ্বাসী নই। কারাে প্রতি বিদ্বেষ নয় সবার প্রতি বন্ধুত্ব- এই আমাদের লক্ষ্য। পাকিস্তানে অবৈধ আটক নিরপরাধ বাঙালি ভাইবােনদের কথা আমার বারবার আজ মনে পড়ছে। স্বাধীন বাংলার মাটিতে নিশ্চয় তারা ফিরে আসবে। আজকের এই দিনে আমি বিশ্ববিবেকের কাছে অনুরােধ করছি, তারা যেন এই মানবিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে। এই মহান দিনে এই হােক আমাদের শপথ, আমরা যেন দলমত, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মিলে স্বাধীন বাংলাদেশে একটি শােষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমাদের স্বপ্নের সােনার বাংলা গড়ে তুলতে পারি। জয় বাংলা।১০১

রেফারেন্স: ২৬ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ