শােষণমুক্ত সােনার বাংলা গড়ার সুকঠিন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ
শােষণমুক্ত সােনার বাংলা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একুশ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা শুক্রবার শপথ গ্রহণ করে। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের বঙ্গভবনে শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটায় অনাড়ম্বর অথচ আকর্ষণীয় পরিবেশে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
নতুন মন্ত্রিসভা বঙ্গবন্ধুসহ ২১ সদস্য বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন। নতুন মন্ত্রীরা হচ্ছেন, জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, জনাব এম মনসুর আলী, জনাব এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান, জনাব আবদুস সামাদ, শেখ আবদুল আজিজ, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, জনাব জহুর আহমেদ চৌধুরী, শ্রী ফণী ভুষণ মজুমদার, ড. কামাল হােসেন, জনাব আবদুল মালেক উকিল, জনাব মতিউর রহমান, জনাব সােহরাব হােসেন, জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী, জনাব আবদুল মান্নান, আবদুর রব সেরনিয়াবত, জে. আতাউল গণি ওসমানী, ড. মফিজ চৌধুরী ও শ্রী মনােরঞ্জন ধর।
মন্ত্রিসভায় একটি নতুন মুখ : নতুন মন্ত্রিসভায় একটি নতুন মুখ হিসাবে শ্রী মনােরঞ্জন ধর শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনি ইতােপূর্বে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। নির্বাচনের পূর্বে তিনি তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ মনােনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন।
তিনজন পুরনাে মন্ত্রী বাদ পড়েছেন : বিদায়ী মন্ত্রি সভায় ৩ জন মন্ত্রী নতুন মন্ত্রি সভা থেকে বাদ পড়েছেন। ৩ জন মন্ত্রী হলেন, বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব এম, আর, সিদ্দিকী, সমবায় মন্ত্রী জনাব শামসুল হক এবং ডাক ও তার বিভাগীয় মন্ত্রী মােল্লা জালাল উদ্দিন। মােল্লা জালাল উদ্দিন স্বাস্থ্যগত কারণে গত ৭ মার্চের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের। দরবার হল থেকে বেরিয়ে আসার সময় বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জালাল অসুস্থ। শামসুল হক এবং এম আর সিদ্দিকী বিদেশ থেকে জাতির সেবা করবেন। কারণ, কূটনীতিকদেরও দরকার রয়েছে। জনাব শামসুল হক এবং এম আর সিদ্দিকীকে বিদেশে রাষ্ট্রদূত এর কাজে নিযুক্ত করা হবে বলে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জানান।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান : বঙ্গভবনে দরবার হলে ভাবগম্ভীর পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন মন্ত্রি সভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানে নব নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিবৃন্দ এবং শহরের বহু গণ্যমাণ্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে রাষ্ট্রপতির সাথে যখন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গভবনে দরবারহলে আগমন করেন, তখন উপস্থিত গণ্যমান্য অতিথিরা দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। জাতীয় সংগীতের পর রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে তাঁদের আসন গ্রহণ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে শপথ গ্রহণ শুরু হয়। সর্বপ্রথমে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর গ্রহণ করেন এবং করমর্দন করে তা রাষ্ট্রপতির কাছে ফিরিয়ে দেন। সমবেত অতিথিরা তখন করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর পর মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ শপথ গ্রহণ করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের যথাক্রমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল এবং এই বিপ্লবী সরকারই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন। পাকিস্তানি কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ফিরে এসে ১৮ জানুয়ারিতে নতুন মন্ত্রি সভা গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর এই মন্ত্রিসভায় সৈয়দ নজরুল শিল্পমন্ত্রী এবং তাজউদ্দীন আহমদ। অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রিসভায় জনাব মনসুর আলী, খন্দকার মােশতাক আহমদ এবং এ, এইচ, এম, কামারুজ্জামান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রি সভার সদস্যকে একের পর এক শপথ গ্রহণ করান। ৭০ মিনিটব্যাপী এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকে। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরােধীদলীয় নেতা ও নব নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব আতাউর রহমান খান সহ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মণি সিং ও আবদুস সামাদ প্রমুখ রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধু বঙ্গভবনের অতিথিদের মাঝে মুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়ান। এবং বিভিন্ন জনের কুশলাদি জিজ্ঞেস করে নব নির্বাচিত মন্ত্রিরাও সমবেত অতিথির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিরােধীদলীয় নেতা ও নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব আতাউর রহমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধু জনাব খানকে কুশল জিজ্ঞেস করেন।৬২
রেফারেন্স: ১৬ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ