You dont have javascript enabled! Please enable it!

উন্নত চরিত্রের মানুষ সৃষ্টি ও সমাজতন্ত্র গড়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চাই— বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে সােনার বাংলা। গড়ে তােলার উপযােগী নতুন শিক্ষা পদ্ধতির উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ কারিগরি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তনের উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই যে শিক্ষা ব্যবস্থা চরিত্রবান মানুষ গড়ে তুলবে এবং জাতি গঠন ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষা দেশকে দ্রুত গড়ে তােলার ব্যাপারে বিশেষরূপে ফলপ্রসূ হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা কমিশনের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি কমিশনকে দ্রুত রিপাের্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কমিশন এমন রিপাের্ট পেশ করবে যা দেশের প্রয়ােজন পূরণ করার এবং সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে দেশকে চালিত করবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত দুশ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনামলে এবং ২৫ বছরের পাকিস্তানি আমলে দেশে শুধুমাত্র কেরানী সৃষ্টি করা হয়েছে। এক্ষণে দেশ গঠনের উপযােগী জনশক্তি সৃষ্টির জন্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষা কমিশনের প্রতি তিনি রিপাের্ট প্রণয়ন ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, রিপাের্ট তৈরির ব্যাপারে কোনরূপ অসুবিধা দেখা দিলে তা দূর করার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য তিনি সব সময় প্রস্তুত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় অধিকাংশ সময়ব্যাপী দেশের শিক্ষা সমস্যা নিয়ে আলােচনা করেন। তিনি বলেন, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন সাধনের জন্য কমিশনের রিপাের্টের অপেক্ষা করছেন। কমিশন রিপাের্ট প্রণয়ন ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে চেষ্টার ত্রুটি করবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাবি দাওয়া উল্লেখ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, দাবি-দাওয়া পেশের সময় তাদের চিন্তা করা উচিত, যে দেশের সামনে কি বিপুল সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে। গত দুশ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে দেশে যে জনসংখ্যা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে , সেগুলাে সমাধানের ব্যাপারে সরকারের ব্যস্ততার প্রতি তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ঔপনিবেশিক শাসনের পরে ২৫ বছরের পাকিস্তানি আমলে অবিচারের ফলে এই সমস্যার বােঝা গুরুভার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় জাতি যে সকল গুরুতর সমস্যার জালে আবদ্ধ হয়েছে, একের পর এক সেগুলাে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খাদ্য থেকে শুরু করে ঔষধ, কাপড় ও নিত্য প্রয়ােজনীয় সব কিছুই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, আজ আমরা যে অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তা থেকে এক কথায় প্রমাণ হয় যে, পাকিস্তানি শাসক গােষ্ঠী বাংলাদেশকে উপনিবেশে পরিণত করার চক্রান্ত করেছিল। পাকিস্তান যেসব জিনিস বাংলাদেশে রপ্তানি করত আজ আমাদের সে সবই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্য সমস্যার উল্লেখ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য চলতি বছরে ১১৪ থেকে ১২৫ কোটি টাকার খাদ্য শস্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। তিনি বলেন, দেশ গঠনের জন্য আমরা বিদেশের সাহায্য চাই। তবে এই সব সাহায্য কোন ক্রমেই আমাদের আত্মমর্যাদার বিনিময়ে হতে পারে না। ভিক্ষার পাত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পরিবর্তে আমাদের কষ্ট সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাবলী সম্পর্কে আলােচনা প্রসঙ্গে আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত হওয়া সত্ত্বেও এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য সম্ভাব্য সব কিছুই করা হবে। তিনি বলেন, সরকার বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলীদের সব সমস্যা দূর করার জন্যই চেষ্টা চালাবে। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিলম্বে ১৮৫ জন শিক্ষক নিয়ােগের আহ্বান জানান। সরকার এই ব্যাপারে ইতােমধ্যে মঞ্জুরি দান করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একটি কম্পিউটার প্রদানের দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কম্পিউটার প্রদানের জন্য তিনি সব কিছুই করবেন। তবে এই ব্যাপারে কিছুটা সময় লাগতে পারে। বঙ্গবন্ধু বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের প্রতি শিক্ষা কমিশনের কাছে সুপারিশ পাঠিয়ে রিপাের্ট প্রদানের আহ্বান জানান। দেশে ব্যাঙের ছাতার ন্যায়। সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতির স্কুল কলেজ গজিয়ে উঠার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ গুলাের পরিবর্তে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা হলে দেশে প্রভূত কল্যাণ সাধন হতাে। পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু সমাবর্তন উদ্বোধনের জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রগণ ‘জয় বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা’ স্লোগান তুলে তাঁকে সম্বর্ধনা জানান। বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংগীত হওয়ার সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলে অসংখ্য কবুতর ও রংবেরংয়ের বেলুন উড়িয়ে দেয়া হয়। সমাবর্তন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী উৎসবের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণসহ খ্যতিনামা বুদ্ধিজীবিগণ যােগ দিয়েছিলেন। আইনমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন, শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী, বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী খন্দকার মােশতাক আহমদ, শ্রম মন্ত্রী আলহাজ্ব জহুর আহমদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমেদ ও শাহ্ মােয়াজ্জেম হােসেন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।৫৮

রেফারেন্স: ১৫ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!