You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.03.11 | বায়তুল মােকাররমের বিশাল সমাবেশে আওয়ামী যুবলীগের কর্মসূচি ঘােষণা | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বায়তুল মােকাররমের বিশাল সমাবেশে আওয়ামী যুবলীগের কর্মসূচি ঘােষণা

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি বলেন, সমাজের বুক থেকে সব রকম দুর্নীতি উচ্ছেদ, সমাজবিরােধী কার্যকলাপ রােধ এবং মুজিববাদ প্রতিষ্ঠাকল্পে আওয়ামী যুবলীগের কর্মীরা সারাদেশব্যাপী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে প্রস্তুত। শেখ মণি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুদ্ধি অভিযানের নির্দেশ দেবেন এবং আমরা তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়িত করবাে। রােববার বিকালে বায়তুল মােকাররম প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে আয়ােজিত জনসভায় শেখ ফজলুল হক মণি সভাপতির ভাষণ দিচ্ছিলেন। উক্ত গণসমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমেদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মােজাম্মেল হক ও ডাঃ আব্দুল হাফিজ সেলিম।
নতুন প্রশাসন চাই : সভাপতির ভাষণে আওয়ামী যুবলীগ প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি শুদ্ধি অভিযানের অন্যতম কর্মসূচি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নতুন মন্ত্রিসভার সাথে নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানিয়ে বলেন যে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠন উপলক্ষে উচ্চপদস্থ আমলা এবং জাতীয়করণকৃত কলকারখানা প্রশাসকদের স্কিনিং করে নতুন করে আমলা ও নতুন প্রশাসক নিযুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, যারা দেশে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী তাদেরকেই উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা এবং জাতীয়করণকৃত কলকারখানায় প্রশাসক নিযুক্ত করতে হবে। যারা রাষ্ট্রীয় চার আদর্শে বিশ্বাসী নয় তাদের অবশ্যই ছাঁটাই করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মুজিববাদ বিরােধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে সমাজের বুক থেকে উৎখাত করা হবে। বাংলাদেশে মুজিববাদে অবিশ্বাসী কোন প্রশাসককে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে তিনি ঘােষণা করেন। শেখ মণি বলেন, মুজিববাদ ও রাষ্ট্রীয় আদর্শের ভিত্তিতে জনগণ নির্বাচনে তাদের রায় দিয়েছেন। তাদের কাউকে আর মুজিববাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেয়া হবে না বলে তিনি ঘােষণা করেন।
অস্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন শুরু করবাে : শেখ ফজলুল হক মণি আওয়ামী যুবলীগের শুদ্ধি অভিযানের কর্মসূচি হিসেবে ঘােষণা করেন যে, বঙ্গবন্ধু ২০ মার্চের মধ্যে সমস্ত বেআইনি অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে বেআইনি অস্ত্র জমা না দিলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পেলে আওয়ামী যুবলীগ কর্মীরা অস্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন শুরু করবে বলে তিনি ঘােষণা করেন। তিনি যুবলীগের কর্মীদের প্রতি সারাদেশের গ্রামে গ্রামে দুর্নীতি বিরােধী দুর্গ গড়ে তােলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমনের দুর্গ গড়ে তােলার জন্য যুবলীগ কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হবে। যারা শুদ্ধি অভিযানে দেশবাসীর কাছে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রচেষ্টা করছে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযান একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম পর্যায়ক্রমে চলবে।
রাশিয়া ও ভারতের বিরােধিতা চলবে না : শেখ মণি বলেন, রাশিয়া ও ভারত বাংলাদেশের দুর্দিনে পরম বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারিত করেছিলেন, কাজেই রাশিয়া ও ভারতের বিরুদ্ধাচরণের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্লামেন্টে নতুন আইন পাশ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ আইন পাশ না করলে আওয়ামী যুবলীগ কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিতে হবে। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, রাশিয়া ও ভারতের বিরুদ্ধে কোন রকম প্রচারণা চলবে না।
সাম্প্রদায়িকতা নিষিদ্ধ করতে হবে : শেখ মণি বলেন, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতারা দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা ক্রিমিনাল আইন পাস করে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আমরাই সেই লাল ঘােড়া : শেখ মণি বলেন, বঙ্গবন্ধু দুবৃত্তের ভূমিকায় যারা অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ঘােড়া দাবড়িয়ে দেয়ার যে কথা ঘােষণা করেছিলেন আওয়ামী যুবলীগের কর্মীরাই সেই লাল ঘােড়া। তিনি বলেন, আগামী দিনের সমৃদ্ধির জন্য ধনী গরিবের ব্যবধান দূর করার জন্য যুবলীগ কর্মীরা আত্মোৎসর্গ করবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও আমরা বিজয় উৎসব না করে শুদ্ধি অভিযানের কর্মসূচি দিয়েছি, কারণ আমরা আর শােষণ অত্যাচার ও দুর্নীতির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত থাকতে চাই না বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ মণি বলেন, ঢাকা শহরে প্রায় ৪০ হাজার ভােট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পড়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তানি মনােভাবাপন্ন সুযােগ সন্ধানিরা আওয়ামী লীগে ভােট দেয়নি। তিনি বলেন, সাড়ে সাত কোটি মানুষ মুজিববাদের প্রতি ম্যান্ডেট দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নীতি কোন দিনই ব্যর্থ হয়নি। বিশ্বে কোন শক্তিই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ক্ষুন্ন করতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নূরে আলম সিদ্দিকী : বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বাংলার জনগণই আমাদের ক্ষমতার উৎস। বন্দুকের নল নয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর পরই সমাজ বিরােধী চক্রের গণআদালতে বিচার হওয়া উচিত ছিল। বঙ্গবন্ধু সমাজ বিরােধীদের ভুল সংশােধনের সুযােগ দিয়েছিলেন। তবুও চোরেরা ধর্মের কাহিনী শােনেনি। তিনি সমাজ বিরােধীদের জনগণের খাদেম হওয়ার আহ্বান জানান। জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের আরেক নাম শেখ মুজিব শেখ মুজিবের অপর নাম বাংলাদেশ। তিনি বলেন, শেখ মুজিবের বাংলায়। ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাই নাই। তিনি বলেন, এদেশে বিরােধী দল গড়ে উঠুক এটাই আমরা চাই। কিন্তু নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এদেশে কোন বিরােধী দল নেই।
শেখ শহীদুল ইসলাম : বাংলাদেশ ছাত্র লীগের সভাপতি শেখ শহীদুল ইসলাম অভিযােগ। করেন যে, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মুখােশ পরে দেশে সমাজতন্ত্র বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযান সমাজতন্ত্র বানচালকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি মুক্তির সংগ্রামের নামই শুদ্ধি অভিযান। শুদ্ধি অভিযানের আগে আত্মশুদ্ধিরও প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মিছিলের পর মিছিল : সভার প্রারম্ভে শহর, শহরতলী ও শহরের বাহির থেকে অসংখ্য মিছিল বায়তুল মােকাররম প্রাঙ্গণে এসে জমায়েত হয়। মিছিলকারীরা বিভিন্ন পােস্টারে সজ্জিত করে ট্রাকে বাসে স্লোগান দিয়ে সভা প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তােলে। নারায়ণগঞ্জ, তেজগাঁও এবং টঙ্গীর শিল্পাঞ্চল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন মিছিল নিয়ে সভায় যােগদান করে।৪২

রেফারেন্স: ১১ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ