You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.03.03 | পাকিস্তানিদের অপরাধের পূর্ণ বিবরণ বিশ্বকে স্তম্ভিত করবে—বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

পাকিস্তানিদের অপরাধের পূর্ণ বিবরণ বিশ্বকে স্তম্ভিত করবে—বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে বলেন যে, প্রচলিত আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী খ্যাতনামা আইনজ্ঞদের পরিচালনাধীনে পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমে দিরায়ে জনসভায়ান্তে হেলিকপ্টারে উঠার পর এবং দ্বিতীয় দফা ঢাকা বিমান বন্দরে হেলিকপ্টার অবতরণের পর ভি. আই. পি লাউঞ্জে বিদেশি সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী উপরােক্ত মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, ইতিহাসে এই ঘৃণ্যতম অপরাধীদের বিচার শুধু ন্যায়ের খাতিরে প্রয়ােজন তা নয়, এটা মানব জাতির একটা পবিত্র দায়িত্ব বটে। তিনি বলেন, পাকিস্তানিদের অপরাধের পূর্ণ বিবরণী ট্রাইব্যুনালের সামনে পেশ করা হলে বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু শেষ নির্বাচনী জনসভা উপলক্ষে যেসব বিদেশি সাংবাদিক তার সাথে দিরাই গিয়েছিলেন তাদের তিনি আরও বলেন যে, এইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই তদন্ত শেষ হওয়ার পর এদের ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে বিচার করা হবে। এই ধরনের বন্দিদের সংখ্যা এবং সম্ভাব্য শাস্তি কি হতে পারে এবং সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বঙ্গবন্ধু বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এদের সংখ্যা সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়। আর এদের শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি বিচারক নই। আইনজ্ঞগণ এদের বিচার করবেন এবং যে শাস্তি উপযুক্ত বলে তারা মনে করেন সে শাস্তি তারা দেবেন।” তিনি সংক্ষেপে তাদের অপরাধ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, এরা ৩০ লাখ লােককে হত্যা, অসংখ্য ঘর-বাড়ি ভস্মীভূত, মেয়েদের শ্লীলতাহানি এবং ১ কোটি লােককে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। এছাড়া যােগাযােগ ব্যাবস্থা, ফসল, খাদ্য শস্যের অবর্ণনীয় ক্ষতিসাধন করেছে। মাত্র কয়েক হাজার লােককে হত্যা করা হয়েছে বলে পাকিস্তান যে দাবি করেছে তার প্রতি উপহাস করে তিনি বিশ্বের সমসাময়িক সংবাদপত্রে যে খবর প্রকাশিত হয়েছিল সেদিকে সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন যে, সামরিক বাহিনীর তাড়া খেয়ে যেসব লােক ভারতে যাওয়ার পথে প্রান্তরে এবং ভারতে গিয়ে অনাহারে ও কলেরায় মারা গিয়েছে তাদেরও পাকিস্তানিদের হাতে নিহতদের তালিকায় ধরা উচিত। উপমহাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণ সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান যে পর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে মেনে না নেবে ততদিন পাকিস্তানের সাথে কোনরূপ আলােচনা হতে পারে না। ভুট্টোর স্ববিরােধী ঠান্ডা ও গরম কথাবার্তার সমালােচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকালে তিনি এক কথা বলেন, আবার বিকালে তার সুর হয় অন্য।এটা শান্তির পথ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। স্বীকৃতি সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনাব ভুট্টো হয়ত মনে করেছেন আমরা পাকিস্তানের স্বীকৃতির জন্য খুব লালায়িত। কিন্তু তার মনে রাখা উচিত সাবেক পাকিস্তানের বৃহত্তম অংশ হয়ে আমরা যখন বের হয়ে গেছি এবং বেলুচি, পাঠান ও সিন্ধীরা যখন অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তখন আমরা পাকিস্তানকে স্বীকার করব কিনা সেটাই প্রশ্ন। তিনি আরও বলেন যে, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে পাকিস্তানে এখন গণভােট অনুষ্ঠিত হলে পাঠান, বেলুচি ও সিন্ধীরা পাঞ্জাবীদের সাথে একত্রে না থাকার পক্ষেই রায় দেবে। বঙ্গবন্ধু জনগণের জীবনযাত্রার মানােন্নয়নের স্বার্থে এই এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিশেষ প্রয়ােজন বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি ও আটক বাঙালিদের প্রশ্ন দুটোকে জড়িয়ে না ফেলার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশে। তখন ঐসব বাঙালি পাকিস্তানে ছিলেন। কাজেই তারা সম্পূর্ণ নিরপরাধ, কোন আন্তর্জাতিক আইনের বিচারেই তাদের আটকিয়ে রাখা যেতে পারে না। বঙ্গবন্ধু বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বলেন যে, ২ লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি পাকিস্তানে গমনের জন্য আবেদন করেছেন। পাকিস্তানকে অবশ্যই তাদের গ্রহণ করতে হবে। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে এবং আটক বাঙালিদের ফিরিয়ে দিলে তিনি এই প্রশ্নটিকে পূর্ণ বিবেচনা করতে প্রস্তুত আছেন কিনা এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানি নাগরিকদের বাংলাদেশে রাখার ব্যাপারে কোনাে বিবেচনার সুযােগ নেই। আটক বাঙালিরা যাতে অবিলম্বে দেশে ফিরতে পারে এবং যতদিন তাদের পাকিস্তানে থাকতে হচ্ছে ততদিন তাদের উপর যাতে কোনরূপ অত্যাচার না হয় তজ্জন্য বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীর প্রতি আবেদন জানান।৮

রেফারেন্স: ৩ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ