You dont have javascript enabled! Please enable it!

শোষণের দিন ফুরিয়ে গেছে- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ কলেজ ময়দানে মুহুর্মুহুঃ করতালির মাধ্যমে ঘােষণা করেন যে, সংবিধানে জনগণের অধিকার এর নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। বাঙালিকে শােষণের দিন ফুরিয়ে গেছে। আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সংবিধানের আলােকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সকালের দিকে প্রবল বৃষ্টিপাত থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক নরনারী ও শিশু দূর-দূরান্ত থেকে বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য এবং সম্বর্ধনা জানানাের জন্য সভা প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত হয়। বঙ্গবন্ধু যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখনও জনতার আগমনের পালা শেষ হয়নি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম তিনি মুন্সিগঞ্জে বক্তৃতা করেন। শ্লোগানে উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, রক্তের । মূল্যে অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার ক্ষমতা পৃথিবীর কোন শক্তিরই নেই। কারণ, স্বাধীনতা শুধু লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের মূল্যে অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতার জন্য কোন জাতি এত রক্ত দেয়নি। তিনি বলেন, বিদেশি শাসক গােষ্ঠীর দীর্ঘদিনের শােষণ এদেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলার মানুষ শােষণ থেকে মুক্তির জন্য বারে বারে আত্মদান করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ৭১-এর ২৫ মার্চের রাতেই আমি গ্রেফতারের পূর্বে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলাম, তােমরা যুদ্ধ কর। তিনি বলেন, আমি গ্রেফতারের সময় তােমাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যেতে পারি নাই, তবুও তােমরা আমার আদেশে যুদ্ধ করে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছ। তিনি বলেন, হানাদার বাহিনী বাংলার যুবক পুলিশ সৈনিক আনসার সবাইকে হত্যা করেছে। ২৫ মার্চ রাতে তার বাড়িতে পাকিস্তান বাহিনী মেশিনগান থেকে গুলি বর্ষণ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি স্থানে বর্বরােচিত আক্রমণ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি তাই বাঙালিদের অস্ত্র ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি জানতাম বাঙালি জাতি হানাদারদের কাছে কোন দিন তাদের অধিকার বিলিয়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে না। তিনি বলেন, হানাদার বাহিনী দুধের শিশুসহ ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। এক কোটি লােককে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে বাংলার বুকে ফিরে আসি তখন মনে হয়েছিল এক ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, সরকারি চাকুরেদের বেতন দেয়ার টাকা ছিল না। নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি বিদেশ থেকে সাহায্য নিতে হয়েছে। কলকারখানার উৎপাদন ছিল বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কৃষকদের বকেয়া খাজনা সুদসহ মাফ করে দিয়েছি। তিনি জনসাধারণকে কলকারখানায় পূর্ণোদ্যমে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কলকারখানা উৎপাদন না বাড়ালে ভবিষ্যৎ নাগরিকরা সুখে শান্তিতে লালিত হতে পারবে না এবং জাতি হিসাবে আমরা বিশ্বের কাছে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবাে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, এক শ্রেণির মানুষ এখনও পুরনাে মানসিকতা আঁকড়ে ধরে বসে আছে। বঙ্গবন্ধু জনসাধারণকে দুষ্কৃতিকারী সমাজবিরােধী চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দুষ্কৃতিকারী ও সমাজ বিরােধীদের নির্মূল করতে না পারলে সােনার বাংলায় পরিণত হবে না। যেকোন মূল্যে। জনগণকে শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের জন্য তিনি আহ্বান জানান।৩

রেফারেন্স: ১ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!