You dont have javascript enabled! Please enable it!

জনগণ আমার সাথে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে- ধামরাইয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘােষণা

বাংলার জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে আমার পিছনে রয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ যেমন ভাবে ‘নৌকায় ভােট দিয়েছিল, এবারের নির্বাচনেও বাংলার মানুষ তেমনিভাবে নৌকায় ভােট দিবে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ধামরাইয়ের অদূরে কুসুরায় ও পলাশে অনুষ্ঠিত দুটি বিরাট জনসভায় ভাষণদান কালে জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপরােক্ত মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন প্রাক্কালে কিছু কিছু লােক নেতা সেজে জনতার কাছে ভােট ভিক্ষা চাচ্ছে। তিনি বলেন, এই আরামপ্রিয় নেতাদের জনগণের কাছে ভােট চাইবার কোন অধিকার নেই। কেননা এরা কখনও দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় নাই। প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে বলেন যে, আচকান আর পায়জামা পরিধান করলেই নেতা হওয়া যায় না, রাজনীতি করা যায় না। রাজনীতি করতে হলে জনগণকে ভালবাসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, বাংলার মানুষকে তিন বছর কিছুই দিতে পারব না। কেননা পাকিস্তানি বর্বর দস্যুরা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বাংলার মানুষ তাও মেনে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবুও আমি প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে চাল, কাপড়, কম্বল, টেষ্ট রিলিফের টাকা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষক ও শ্রমিকদেরকে ক্ষেত খামার ও কলকারখানায় উৎপাদন বাড়াবার জন্যে উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দুঃখ করে বলেন, এত জীবনহানি ও এত রক্তপাতের পরে মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, সােনার বাংলা গড়তে হলে সােনার মানুষ চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সকল সম্পদের মালিক দেশের জনগণ, জনগণকে শােষণ করার সুযােগ আর কখনও কাউকে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, শিল্প কারখানা ব্যাংক ও বীমা জাতীয়করণ করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি বিশেষের মালিকানায় আর এগুলাে নেই। সবকিছুর মালিক জনগণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার নিরন্ন ভুখা নাঙ্গা মানুষকে। বাঁচানাের জন্যে বিদেশ থেকে সাহায্য আনতে হয়েছে। চাল কাপড় তেল—ঔষধ প্রভৃতি বিদেশ থেকে এনেছি এবং বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের এই মারাত্মক অবস্থাতেও সব বকেয়া খাজনাসহ ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের আরও কষ্ট ও দুঃখ সহ্য করতে হবে অদূর ভবিষ্যতে সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবনের জন্যে। প্রধানমন্ত্রী বলেন দেশের অভ্যন্তরে সশস্ত্র গুন্ডা বদমায়েশ চোর ডাকাত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তিনি বলেন, বাংলার মানুষ এই সব সশস্ত্র দুবৃত্তদের জন্যে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না। এদেরকে বাংলার মানুষ শায়েস্তা করে ছাড়বে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষ। যদি অনাহারে মৃত্যু বরণ করে তবে তার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, আমার প্রথম স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা, তা অর্জিত হয়েছে। আর এখন স্বপ্ন হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে গড়ে তােলা। ভাষণের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশাল। সমাবেশের নিকট জানতে চান যে, এবার তারা নৌকায় ভােট দিবে কি না? সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ মহুর মুহুর্মুহুঃ আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে দুই হাত তুলে প্রতিউত্তর প্রদান করে।১১৩

রেফারেন্স: ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!